কুড়িগ্রাম জেলা জুড়ে বিভিন্ন সড়কের দুপাশে গাছে গাছে পেরেক ঠুকে টাঙানো হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যে যেখানে পারছে পেরেক ঠুকে গাছকে বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করছে। শুধু গাছ নয় বিজ্ঞাপনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীরও । এতে করে পরিবেশের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মানুষের জীবন বাঁচানো গাছেরই ক্ষতি করছে কিছু বিকৃত মানসিকতার মানুষ।
জেলার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, চিলমারী উপজেলা পরিষদ কার্যালয় চত্বরে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে সরকার দলীয় রাজনৈতিক পোস্টার ও ফেস্টুনে অফিসের নাম ঢেকে গেছে। দেখলে সাধারণ মানুষের মনে হবে কোনো রাজনৈতিক কার্যালয় এটি।
নাগেশ্বরী উপজেলা পরিষদ চত্বরে নারকেল গাছসহ বিভিন্ন গাছে স্থানীয় সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ফেস্টুন পেরেক দিয়ে লাগানো হয়েছে।
রাজারহাট উপজেলার নাজিমখা সড়কে রাজারহাট পাইলট, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং মীর ইসমাইল ডিগ্রি কলেজে ভিতরে ও রাস্তার দুধারে ছোট-বড় এবং মোটা-চিকন বিভিন্ন মূল্যবান গাছে শত শত পোস্টার, ফেস্টুন এবং রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ভরে গেছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা মাহাবুব আলম জানান, পুরো উপজেলার বিভিন্ন অফিস এবং গাছে নেতাদের পোস্টার লাগানো। এতে করে সরকারি অফিসের সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিবছরের জুন মাস আসলেই নামমাত্র রঙচং করলেও কিছুদিন পর আবার একই চিত্র।
রাস্তার দুধারের গাছে পেরেক দিয়ে পোস্টার, ফেস্টুন লাগিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা
রাজারহাট উপজেলার বাসিন্দা কলেজছাত্র সাব্বির বলেন, ‘নাজিমখা সড়কে প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে আনুমানিক পাঁচ শতাধিকেরও বেশি গাছে পেরেক দিয়ে পোস্টার ,ফেস্টুন লাগানো। অবৈধভাবে গাছে পেরেক দিয়ে পোস্টার, ফেস্টুন লাগিয়ে মারাত্মকভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে। আইন থাকলেও শুধু কাগজ কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে। কোনোদিন দেখলাম না কোনো অভিযান পরিচালনা করে জেল, জরিমানা করা হয়েছে।’
পরিবেশবিদ কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘পেরেক লাগানোর কারণে গাছের গায়ে যে ছিদ্র হয় তা দিয়ে পানি ও তার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব প্রবেশ করে। এতে গাছে দ্রুত পচন ধরে। ফলে গাছের খাদ্য ও পানি শোষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এতে করে গাছটি মারাও যেতে পারে। তাই কোনো গাছে পেরেক ঢুকানো মানে ওই গাছের চরম ক্ষতি করা। গাছের পরিচর্যা করার বদলে উল্টো বিজ্ঞাপনের নামে গাছের চরম ক্ষতি করা হচ্ছে। গাছের প্রতি এই নিষ্ঠুর আচরণ দেশের বন আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ হওয়ায় কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’
আইনজীবী আহসান হাবীব নীলু জানান, শহরের সৌন্দর্য রক্ষা ও পরিচ্ছন্নতা বিধানে সরকার ২০১২ সালে দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১২ পাশ করেন। সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কেউ পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড লাগালে অর্থদণ্ডসহ বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেবার বিধান রয়েছে। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ না থাকায় দিন দিন বিজ্ঞাপনের নামে সৌন্দর্য নষ্ট করার যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা নিয়মিত রাখার দাবি জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ জানান, জেলার মাসিক সমন্বয় মিটিং এ অবৈধভাবে গাছে পোস্টার, ফেস্টুন ইত্যাদি লাগানোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এগুলো অপসারণে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে।