প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলো অনুদান চায় না। বরং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রকৃত কাঠামোগত রূপান্তরের জন্য প্রাপ্য চায়।
রোববার কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি-৫: সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধি) পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশগুলো দান চায় না। আমরা যা চাই তা হল আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির অধীনে আমাদের পাওনা। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর এলডিসিতে উত্তরণে তাদের পারফরম্যান্সের জন্য কিছু প্রণোদনা থাকা উচিত। একটি বর্ধিত সময়ের জন্য তাদের আন্তর্জাতিক সহায়তা ভোগ করা উচিত। তাদের উন্নত বিনিয়োগ এবং উৎপাদনশীল সক্ষমতা কিভাবে তৈরি করা যায় তা জানতে হবে।
‘স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য কিছু উদ্ভাবনী ও ক্রান্তিকালীন অর্থায়ন ব্যবস্থা থাকতে পারে। বৈশ্বিক বাণিজ্যে তাদের অংশ দ্বিগুণ করার জন্য টেকসই সহায়তা প্রয়োজন। উন্নত দেশগুলোকে এলডিসির জন্য ওডিএ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতে হবে।’
এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়নকে নমনীয় ও অনুমানযোগ্য করা উচিত বলে মন্তব্য করেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, এলডিসিগুলোতে প্রযুক্তি হস্তান্তর বাস্তব এবং অর্থপূর্ণ হওয়া দরকার। অভিবাসী শ্রমিকদের তাদের অধিকার ও মঙ্গলের জন্য সুরক্ষা প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেশিরভাগ উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতি থেকে আমরা যে শুল্ক এবং কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পেয়েছি তা আমাদের বেসরকারি খাতকে একটি দৃঢ় উৎপাদন ভিত্তি তৈরি করতে সাহায্য করেছে।
‘ট্রিপস চুক্তির অধীনে প্রদত্ত পেটেন্ট মওকুফ সুবিধা স্থানীয়ভাবে আমাদের ওষুধের চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণের সুযোগ করে দিয়েছে। আর অপর ডব্লিউটিও চুক্তির অধীনে রেয়াতগুলো আমাদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্ষুধা ও অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম করেছে। আমরা যে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়েছি তা আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে সহায়তা করেছে।’
স্বল্পোন্নোত দেশ হয়েও নানা সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গার সমস্যা মোকাবিলা করছে বলে সম্মেলনে জানান বাংলাদেশের সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘মাত্র এক দশকের মধ্যে বর্তমান সরকার দেশের দারিদ্র্য হার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। ঝুঁকি প্রশমন ও জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষেত্রে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষামূলক পদক্ষেপে ব্যয় করা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কভিডকালেও ২০২১-২২ সালে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি এর স্থিতিস্থাপকতা প্রমাণ করেছে। মাথাপিছু আয় এক দশকে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে পৌঁছেছে।
‘বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার এবং দ্রুত বর্ধনশীল ডিজিটাল অর্থনীতি, যোগাযোগ ও লজিস্টিকসের একটি সম্ভাব্য আঞ্চলিক কেন্দ্র। আমাদের পরবর্তী ভিশন ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা।’
সম্মেলনের সভাপতি ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানি উদ্বোধনী বক্তব্য দেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস, ইউএনজিএ-র সভাপতি সাবা করোসি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সভাপতি লাচেজারা স্টোয়েভা এবং মালাবির প্রেসিডেন্ট ও এলডিসি গ্রুপের চেয়ারপারসন লাজারাস ম্যাকার্থি চাকাওয়েরা সম্মেলনে বক্তব্য দেন।