বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অধ্যাপক তানজীমের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের চেষ্টায় ছাত্রলীগ নেতা: শিক্ষার্থীদের বিবৃতি

  • প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়   
  • ৫ মার্চ, ২০২৩ ১১:০৬

আত্মহত্যার চেষ্টা করা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণবিষয়ক উপসম্পাদক এসএম এহসান উল্লাহ ওরফে ধ্রুব যে ক্লাসে অধ্যাপক তানজীমের বিরুদ্ধে অপমানের অভিযোগ করেছেন, সেই ক্লাসে উপস্থিত ৫৩ শিক্ষার্থী বিবৃতি দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানের বিরুদ্ধে অপমানের অভিযোগ এনে ছাত্রলীগের যে নেতা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, তার বিরুদ্ধে একজোট হয়ে শনিবার রাতে বিবৃতি দিয়েছেন সহপাঠীরা।

আত্মহত্যার চেষ্টা করা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণবিষয়ক উপসম্পাদক এসএম এহসান উল্লাহ ওরফে ধ্রুব যে ক্লাসে অধ্যাপক তানজীমের বিরুদ্ধে অপমানের অভিযোগ করেছেন, সেই ক্লাসে উপস্থিত ৫৩ শিক্ষার্থী ওই বিবৃতি দেন।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, এহসান ধ্রুবর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার কার্যকারণ ব্যক্তিগত। ধ্রুব নিজের রাজনৈতিক পরিচয় জুড়ে দিয়ে একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছেন।

বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, একজন নারী শিক্ষার্থীকে হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করতে একজন সচেতন শিক্ষকের যে ভূমিকা পালন করার কথা, অধ্যাপক তানজীম তাই করেছেন। ধ্রুবর ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক উসকানি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও অমূলক এবং তা প্রতিরোধ করতে তারা সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করবেন।

বিবৃতিতে সেদিনের ক্লাসে উপস্থিত ৫৩ শিক্ষার্থীর সবার স্বাক্ষর দেওয়া আছে। ওই বিজ্ঞপ্তির সমর্থনে ব্যাচের আরও ২১ শিক্ষার্থী স্বাক্ষর দিয়েছেন।

এতে বলা হয়, ঘটনার দিন ক্লাসে প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এহসান ধ্রুব তার ফেসবুক প্রোফাইলে বিভাগের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানকে দোষী উল্লেখ করে আত্মহননের ঘোষণা প্রচার করেন। সেই পোস্টে তিনি তানজীম স্যারকে প্রেরণ করা একটি মেইলের স্ক্রিনশটও যুক্ত করেন। এহসান ধ্রুবর প্রচারিত একপাক্ষিক বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি মহল বিভ্রান্তিবশত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রচার করতে শুরু করে এবং ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অবস্থান গ্রহণ করে। এই প্রেক্ষিতে জনমনে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তি দূর করতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীবৃন্দ, যে ঘটনার প্রেক্ষিতে এহসান ধ্রুবর এই প্রতিক্রিয়া সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে নিজেদের বক্তব্য এবং অবস্থান স্পষ্ট করছি।’

এতে বলা হয়, “ঘটনার শুরু ২ মার্চ, বৃহস্পতিবার বিকেলে, তানজীম স্যারের ক্লাস চলাকালীন। সম্ভবত ক্লাস শুরু হওয়ার আগে এহসান ধ্রুব স্বপ্রণোদিত হয়ে তানজীম স্যারের কাছে ব্যাচের একটা বিষয়ে অভিযোগ দেয়। যে ঘটনার প্রেক্ষিতে অভিযোগ, সেই ঘটনায় তার (ধ্রুব) কোনো সংশ্লিষ্টতাও নেই। সে (ধ্রুব) ক্লাসে আসার আগেই স্যার আমাদের ক্লাস শুরু করেন এবং ইতোমধ্যে তিনি সহপাঠীদের নিয়ে গুজব ছড়ানোকে ইর‍্যাশনাল বিহেভিয়ার (অযৌক্তিক আচরণ) হিসেবে অভিহিত করেন। এরপরে তিনি আমাদের পড়ানো শুরু করেন।

“ক্লাসের মাঝামাঝি সময়ে এহসান ধ্রুব ক্লাসরুমে প্রবেশ করে। ক্লাসের শেষের দিকে স্যার ধ্রুবকে দাঁড়াতে বলেন এবং তার রটানো গুজবের সূত্র সমন্ধে জানতে চান। ধ্রুব কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং এর বদলে স্ক্রিনশট দেখানোর ইচ্ছা পোষণ করে। তানজীম স্যার এরপরও নাম বলায় গুরুত্ব আরোপ করলে সে নাম বলতে ব্যর্থ হয়। তানজীম স্যার তখন সহপাঠীদের নামে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে বারণ করেন। প্রত্যুত্তরে এহসান ধ্রুব আশ্চর্জজনকভাবে ‘They conspired against me so I conspired against them’ (তারা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে বলে আমিও তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছি) এই স্বীকারোক্তিমূলক বাক্যটি ব্যবহার করে যা শুনে স্বাভাবিকভাবে আমরা অবাক হই।

“এরপর তানজীম স্যার তাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে নিজের সহপাঠীদের সম্পর্কে কী বলা যায় আর যায় না সেটি তার বোঝা উচিত। প্রত্যুত্তরে যখন ধ্রুব কিছু বলতে চায়, তখন স্যার তাকে থামিয়ে বলেন যে, একজনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কারণে সেই ব্যক্তির সম্পর্কে কুৎসা রটনা করার অধিকার তার (ধ্রুব) নেই। এরপর স্যার ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলে ধ্রুব তার কাছে ক্ষমা চাইতে যায়। পরবর্তীতে স্যার তার সাথে নিচে নেমে তাকে ফুচকা খাওয়ান।”

বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘এই ঘটনায় আমাদের সহপাঠী ধ্রুবর ফেসবুক পোস্ট এবং আত্মহননের চেষ্টা বেশ দুঃখজনক, কিন্তু একটা ব্যাপার ভালোভাবে স্পষ্ট করা প্রয়োজন যে, এই পুরো ঘটনার সাথে এহসান ধ্রুবর রাজনৈতিক পরিচয়ের কোনোই যোগসূত্র ছিল না। এহসান ধ্রুবকে খুঁজে বের করতে আমাদের ব্যাচ এবং সম্পূর্ণ বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ সর্বাধিক তৎপরতা প্রদর্শন করেছে। আমরা তার দ্রুততম সুস্থতা কামনা করছি, তবে ওপরে বর্ণিত প্রেক্ষাপট এবং পরশু থেকে এখন অব্দি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে কিছু কথা স্পষ্ট করা অত্যধিক জরুরি।

‘এহসান ধ্রুবর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার কার্যকারণ একান্তই ব্যক্তিগত। এই ঘটনায় অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানের ভূমিকা অত্যন্ত দায়িত্বশীল ছিল এবং তা নির্দ্বিধায় প্রশংসার দাবিদার। একজন নারী শিক্ষার্থীকে হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করতে একজন সচেতন শিক্ষকের যে ভূমিকা পালন করার কথা, তিনি তাই করেছেন। ঠিক কী কারণে এহসান ধ্রুব এই ঘটনার সাথে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় জুড়ে দিয়ে একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করল, তা ক্লাসে উপস্থিত পঞ্চাশের অধিক শিক্ষার্থীর কাছে দুর্বোধ্যই বটে।’

তারা বলেন, ‘তানজীম স্যার এই ঘটনা চলমান অবস্থায় ছাত্রলীগ কিংবা কোনো প্রকার রাজনৈতিক পরিচয়ের দিকে বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত না করলেও স্যারের নামে এই ধরনের কুৎসা রটানো কিংবা বিদ্বেষমূলক আচরণ সত্যিই দুঃখজনক। এহসান ধ্রুবর ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক উসকানি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও অমূলক এবং তা প্রতিরোধ করতে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের প্রত্যেক শিক্ষার্থী সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করবে, এই প্রত্যয় আমরা ব্যক্ত করতে চাই। পাশাপাশি সকল রাজনৈতিক এবং শিক্ষার্থী মহলকে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।’

বিচার চেয়ে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ

ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের বিচার চেয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।

তাদের অভিযোগ ছিল, অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান তাদের নেতা ধ্রুবকে ক্লাসে অপমান করেছেন। সে অপমান সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।

সংগঠনটির ভাষ্য ছিল, ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ধ্রুব। পরে তাকে শহীদুল্লাহ হলের পুকুরপাড় থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ফেসবুক স্ট্যাটাস

আত্মহত্যার চেষ্টাকারী ছাত্রলীগ নেতা এ নিয়ে ‘এন্ড অফ দ্য জার্নি’ শিরোনামে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সালাম জানবেন। আমার খুব ইচ্ছা ছিল আপনার সাথে দেখা করার; আপনার একটা ছবি তোলার। পূরণ হলো না। জীবনের সব ইচ্ছা পূরণ হয় না। কী আর করা, কিন্তু আপনার কাছে আমি আমার সাথে হওয়া অন্যায়ের বিচার দিয়ে গেলাম!’

পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘প্রিয় তানজিম স্যার, আপনার পরে আমার আর কোনো রাগ নেই। ভালো থাকবেন। বাবা মা, ক্ষমা করে দিও।

‘ভেবেছিলাম দোকান ঘুরে ঘুরে দুই-একটা করে কিনব। এক দোকানেই দুই পাতা বিক্রি করল। সন্দেহ হচ্ছে ঔষধে ভেজাল আছে। যদি ভেজাল না থেকে থাকে তাহলে এন্ড অফ দ্য জার্নি (যাত্রা বা জীবনের সমাপ্তি)।’

এই পোস্টের নিচে ধ্রুব অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানকে মেইল করার একটি স্ক্রিনশটও সংযুক্ত করেন। সেই মেইলের সাবজেক্ট দেয়া হয়েছে ‘থ্যাংকস ফর কিলিং মি স্যার।’

মেইলে ধ্রুব লিখেছিলেন, ‘আই ডিড’ন্ট ডিজার্ভ দ্যাট। আই ওয়েন্ট টু ইউ অ্যাজ মাই টিচার কজ আই ওয়াজ’ন্ট গিল্টি। ইফ ইউ ওয়ান্টেড টু প্রিভেন্ট দ্য রিউমার, ইউ কুড ডু ইট জাস্ট বাই ওয়ার্নিং এভরিওয়ান, বাট ইউ চুজ টু হিউমিলিয়েটেড মি (আমি এটা আশা করিনি। শিক্ষক বলে আপনার কাছে গিয়েছিলাম, কারণ আমি দোষী ছিলাম না। গুজব ঠেকাতে চাইলে আপনি সবাইকে সতর্ক করে সেটা করতে পারতেন, কিন্তু আপনি আমাকে অপমান করার সিদ্ধান্ত নিলেন)।

‘আপনি আপনি যতই অস্বীকার করেন, আমি ছাত্রলীগ করি বলে আপনি এমন করেছেন। ডিইউ ক্যাম্পাস নোজ মি মোর অ্যাজ আ ফটোগ্রাফার দ্যান এ বিএসএল অ্যাকটিভিস্ট (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কর্মীর চেয়ে ফটোগ্রাফার হিসেবেই আমার বেশি পরিচিতি)। আমি রাজনীতিতে সক্রিয়ও না দীর্ঘদিন ধরে। আমার সাথেই অন্যায় করা হয়েছে, আপনিও আমার সাথে অন্যায় করলেন। থ্যাংকস ফর কিলিং মি (আমাকে হত্যার জন্য ধন্যবাদ)।’

কী বলেছিলেন অধ্যাপক তানজীম

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান শুক্রবার নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, “গত সোমবার এহসান আমার রুমে আসে। রুমে এসে সে নিজের পরিচয় দিয়ে গত বছর হওয়া একটি ট্যুর নিয়ে একটা মেয়েকে ঘিরে খুব অশ্লীল কথা বলে। এরপর আমি তাকে বলি, তুমি কার সামনে এসব কথা বলছ? আমি তোমার শিক্ষক। আর আমিই তো তাদের ট্যুরে নিয়ে গেছি। আর আমি কি এতটাই দায়িত্বজ্ঞানহীন যে, আমার উপস্থিতিতে আমার শিক্ষার্থীরা এসব কাজ করবে?

“এরপর সে বলে, ‘স্যার এটা সত্য। এটা অনেকেই বলাবলি করছে।’ তারপর আমি বলি, যারা বলছে, তুমি আমাকে নামগুলো বলো। ডিপার্টমেন্ট নিয়ে এত বাজে কথা; এগুলো বন্ধ হওয়া জরুরি। এর মধ্যে সে ওই মেয়েটাকে নিয়ে অনেক কথা বলার চেষ্টা করছে। আমি তাকে বলি, এটা তোমাদের পারসোনাল সমস্যা। আমি এটা নিয়ে আলাপ করতে চাই না।”

তিনি বলেছিলেন, ‘পরে শুনেছি এই ছেলের সাথে সেই মেয়ের বন্ধুত্ব ছিল। একপর্যায়ে এই ছেলে সেই মেয়েকে প্রপোজ করে, কিন্তু মেয়েটি রাজি হয়নি। ধ্রুবর ভাষ্য, রিজেক্ট করার পর থেকে সেই মেয়ে এবং তার বন্ধুরা তাকে অপদস্ত করে বেড়ায়।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এ অধ্যাপক বলেছিলেন, ‘সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার এক শিক্ষকের অনুরোধে আমি তাদের একটা ক্লাস নিতে যাই। যদিও তাদের কোনো কোর্স আমি পড়াই না। তখন ক্লাস শেষে আমি তাকে দাঁড় করাই। তাকে বলি, তুমি যে সুন্দরবন ট্রিপ নিয়ে এত আজেবাজে কথা বলছো আর সেটি আমার রুমে গিয়ে আমাকেও বলেছো, এটা কি ঠিক? তোমার আশেপাশে থাকা সবাই তো তোমার বন্ধু। তাদের সম্পর্কে কি এত আজেবাজে কথা বলা যায়?

‘এরপর আমি তাকে বলি, এই রিউমারটা থামানো জরুরি। কারণ এটি আমার এবং ডিপার্টমেন্টের জন্য খারাপ। তুমি যদি অনেস্ট হও তাহলে যারা এটি তোমাকে বলেছে তাদের নামগুলো বলো। কারণ এটি আর বেশিদূর আগানো উচিত না। এরপর সে নাম বলতে না চাইলে আমি তাকে বলি, ওকে। এবার মুখটা স্টপ করে বসো। আমি আর এই বিষয়ে কথা বলতে চাই না।’

তানজীমউদ্দিন বলেছিলেন, “এরপর সে বসা থেকে আবার উঠে দাঁড়ায়। সে বলে, ‘স্যার আমি কিন্তু ঠিক আছি।’ তখন আমি বলি, আমি এটা নিয়ে আর কোনো কথাই বলতে চাই না। এরপর আমাদের ক্লাস শেষ হয়ে যায়। তখন সে আবার আমার সামনে আসে। আমি তাকে বলি, তুমি আমার থেকে দূরে থাকো। আমি কথা বলতে চাই না।

“এরপর আমি আরও কিছুদূর আগানোর পর সে আবার আসে। বলে, ‘স্যার আপনি আমাকে হিউমিলিয়েট (অপমান) করেছেন। মেয়েটা এবং তার বন্ধুরাও আমাকে হিউমিলিয়েট করে।’ আমি তাকে বলি, তাদের হিউমিলিয়েশনের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। আমি তোমার কাছে শুধু জানতে চেয়েছি, কারা এগুলো ছড়াচ্ছে। এর বেশি কিছু তো আমি তোমার কাছ থেকে জানতে চাইনি। এরপর আমি যখন লিফটের সামনে যাই, তখন সে কান্নাকাটি করে আমাকে বলে, ‘আমি আত্মহত্যা করলে আপনি দায়ী থাকবেন।’ এসব বলে সে চলে যায়।”

পরের অবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এ শিক্ষক বলেছিলেন, “পরে আমি নিচে নেমে তার দুজন সহপাঠীর সাথে কথা বলছিলাম। তখন ধ্রুব আমাদের ক্রস করে চলে যাচ্ছিল। তখন আমি তাদের দুজনকে বললাম যে, ধ্রুবকে একটু ডাকো; আমি একটু কথা বলি। সে আসলে আমি তাকে বলি, তুমি কি কোনো মানসিক চাপে আছো? আমি তাকে বলি, তুমি কি দুপুরবেলা বা সকালে খেয়েছ? সে বলে, ‘না স্যার।’ তখন আমি তাকেসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে খেতে যাই।

“এরপর ফুচকা খাই। এ সময় আমি তাকে বোঝালাম যে, একটা মেয়ের ঘটনা নিয়ে কেন তুমি পিছনে পড়ে থাকছো? তোমার কাজ তো পড়ালেখা করা। মন দিয়ে পড়াশোনাটা করো। তখন সে আবারও বলল যে, আমি তাকে হিউমিলিয়েট করেছি। আমি বলি, তুমি মানসিক চাপে আছো। তোমার বাবার নম্বরটা আমাকে দাও। আমি কথা বলি।

“এরপর সে আবার বলে, ‘স্যার আপনি আমাকে হিউমিলিয়েট করেছেন, কারণ আমি ছাত্রলীগ করি।’ তার কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়ি। বলি ছাত্রলীগের সাথে এটার কী সম্পর্ক? এটাকে এভাবে দেখো না। সে বলে, ‘না, ছাত্রলীগ করি বলেই আপনি আমাকে অপমান করেছেন।’ এরপর তাকে আরও বুঝিয়ে আমি বাসায় চলে যাই।

“এরপর রাতে যখন আমি শিক্ষক ক্লাবে যাই, তখন একজন ছাত্রের মাধ্যমে আমি পোস্টের বিষয়টা জানতে পারি। এরপর তার বাবাকে ফোন দিই। তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার মা ফোন ধরে। উনার সাথে আমি কিছুক্ষণ কথা বলি। এরপর আমি তার হলে তার কয়েকজন বন্ধুকে পাঠাই। তারা তাকে খুঁজে পায়নি। পরে আমি তাকে কল দিই। সে ফোন কেটে দেয়। এরপর আমার সাবেক এক শিক্ষার্থীকে আমি তার নাম্বারটা দিয়ে তাকে লোকেট করতে বলি। পরে তার অবস্থান জানা যায়।”

এ বিভাগের আরো খবর