ঢাকার ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা এলাকায় গৃহ পরিচারিকা হিসেবে অন্যের বাসায় কাজ করেন মিলি আক্তার। গর্ভাবস্থায় স্বামী আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। এরই মধ্যে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন মিলি। তার অসুস্থতার সময়ে গত দেড়-দুই মাস ধরে পরিচিত রুবেল ও তানিয়া আফরোজা নামের এক দম্পতি নিয়মিত খোঁজ খবর ও নানা সহযোগিতার হাত বাড়ায়।
এতে তাদের সঙ্গে মিলির ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে রুবেল ও তার স্ত্রী তানিয়ার কাছে নবজাতক সন্তানকে রেখে ওষুধ আনতে বাইরে যান মিলি। আর এ সুযোগে নবজাতক শিশুটিকে নিয়ে পালিয়ে যায় ওই দম্পতি।
পরবর্তীতে মিলির কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন রুবেল। না পেলে খুলনার রুপসা নদীতে ফেলে শিশুর হত্যার হুমকি দেন। এ ঘটনার পরে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন মিলি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢুলিভিটা বাজার কমিটির কাছ থেকে রুবেলের বাসার ঠিকানা নিয়ে বাসায় গেলে বাসা তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। ২৮ ফেব্রুয়ারি রুবেল মোবাইল ফোন চালু করে নবজাতক শিশুকে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে মোবাইল বন্ধ করে দেয়।
পরে ১ মার্চ রুবেল অন্য একটি নাম্বার দিয়ে মিলিকে ফোন করে জানায়, নবজাতক তার কাছে আছে। ফিরে পেতে এক লাখ টাকা দিতে হবে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে নবজাতককে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়।
এরপরেই র্যাব-৪ এর একটি দল শুক্রবার যশোর অভয়নগর আমতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী রুবেল শেখ ও তার স্ত্রী তানিয়া আফরোজকে গ্রেপ্তার করে। অপহৃত ৭দিনের নবজাতক শিশুটিকে উদ্ধার করা হয় ।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার দম্পতি জানায়, ২ থেকে ৩ মাস ধরে ঢুলিভিটা বাজার এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছে তারা। রুবেল ধামরাই ঢুলিভিটার বাজার এলাকায় বিভিন্ন দোকান ও মানুষজনের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ করত না। পাওনাদাররা ধার পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকায় সে ঢুলিভিটা এলাকা থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। পাশাপাশি ভুক্তভোগীর সঙ্গে সু-সম্পর্ক থাকায় কৌশলে মিলির নবজাতক শিশুকে অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনাও করে তারা।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, সুযোগ বুঝে নবজাতক শিশুকে নিয়ে বের হয়ে যায় তারা। শিশুটির মাকে মুক্তিপণের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। এরই মধ্যে নবজাতক শিশুটি তার মায়ের অনুপস্থিতিতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, মুক্তিপণ না পেলে শিশুটিকে গোপনে রূপসা নদীতে ফেলে দিয়ে আত্মগোপন করবে।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার রুবেলের বিরুদ্ধে যশোরের অভয়নগর থানায় ধর্ষণ ও অপহরণ মামলা রয়েছে। জীবিকার তাগিদে গত সাত থেকে আট বছর ঢাকায় গামেন্টর্সকর্মীর পাশাপাশি রাজমিস্ত্রীর কাজ করত রুবেল।
রুবেল ইতোপূর্বে একাধিক বিয়ে করে। গ্রেপ্তার তানিয়া আফরোজ একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। গত তিন বছর পূর্বে পরিবারের অমতে রুবেলকে বিয়ে করে। এরপর থেকে তার পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে।