ওপরে কোনটায় খড়কুটো, কোনটায় ভাঙা টিনের ছাউনি ও পলিথিনে মোড়ানো, কোনটিতে মাটির দেয়াল, বাঁশের বেড়া ও বাঁশের চাপা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর। এরকম তিনটি ঘরে দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করছেন তিন অসচ্ছল পরিবার। তাদের মাথা গোজার ঠিকানা এ ঘরগুলো।
জরাজীর্ণ, ভাঙা, লক্কর-ঝক্কর ঝুপড়ি ঘরে মারাত্মক দুর্ভোগের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেক কষ্টে। রোদে শুকিয়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করছেন তারা। ঘরের এমনই অবস্থা ভেতরে ঢুকতে হলে হামাগুড়ি না খেয়ে ঢোকার কোনো উপায় নেই। বৃষ্টি হলে পানিতে সয়লাব হয়ে যায় ঘরের মেঝে। ঘরের ভেতর দিনের বেলাও পৌঁছে না সূর্যের আলো। তারা পায়নি প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের কোনো ঘর।
এমনই দুরবস্থা পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা নয় মাইল যৌথ খামার গ্রামের অসচ্ছল তিন পরিবারের।
এ গ্রামের বাসিন্দা ৭৬ বছর বয়সী বৃদ্ধা কচতি ত্রিপুরা। স্বামী গত হয়েছেন তিন যুগ হলো। সন্তান, পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনি নিয়ে থাকেন তেমনই ছন ও বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি একটি খুপরি ঘরে।
তিনি বলেন, ‘টিনের কিংবা পাকা ঘর পাইনি। ছনের ঘরেই কষ্ট করে থাকতে হচ্ছে।’
কচতি ত্রিপুরা জানান, তারা জন্ম থেকেই এসব ঘরের মধ্যেই জীবন কাটিয়েছেন। এখন সবাই ইট ও টিনশেড দিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি করছে। কিন্তু দরিদ্র মানুষ বলে, ভাঙাচোরা খুপরি ঘরই আশ্রয়। কবে টিনের কিংবা পাকা ঘরে ঘুমাতে পারবেন, বেঁচে থাকা অবস্থায় তা হবে কি না জানেন না তিনি।
একই গ্রামে দিনমজুর কাঞ্চন ত্রিপুরা। তিনিও স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ছনের চাল ও মাটির দেয়ালে তৈরি খুপরি ঘরেই বসবাস করেন। স্বল্প আয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচও ঠিকভাবে চালাতে পারেন না।
কাঞ্চন ত্রিপুরার স্ত্রী কনিকা ত্রিপুরা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষে অনেককেই একটি করে পাকা ঘর উপহার দিয়েছে। কিন্তু আমাদের ভাগ্যেই জুটেনি সে পাকা ঘর নামক সোনার হরিণ।’
একই গ্রামে আরেক বৃদ্ধা হিরনি ত্রিপুরা। বয়স্ক উপার্জনক্ষম স্বামীকে নিয়ে তিনিও ভাঙা টিনের চাল ও বাঁশের বেড়াতে তৈরি ঝুপড়ি ঘরে দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘জরাজীর্ণ এ ঘরে বর্ষাকালে খুবই কষ্ট হয়। আমরা গরীব মানুষ পাকা ঘর আমাদের কে দিবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা কবিতা ত্রিপুরা বলেন, ‘আমাদের গ্রামে এ তিনটি পরিবার খুবই অসচ্ছল। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা চাইলে তাদেরকে একটি করে পাকা ঘর করে দিতে পারে।’
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের প্রাক্তন ইউপি সদস্য গনেশ ত্রিপুরা বলেন, ‘এ তিন পরিবারের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। উনারা সরেজমিনে তদন্ত করে গেছেন অনেকদিন হলো। পরে আর কোনো খোঁজ খবর পাইনি। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সরকারি অর্থায়নে এদের জন্য একটি করে পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়ার অনুরোধ করছি।’
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জেলা প্রশাসন তাদের পাশে দাঁড়াবে।’