স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিষয়ে পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনে (এলডিসি ৫: সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধি) যোগ দিতে শনিবার কাতারের রাজধানী দোহার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সরকারপ্রধান ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট বেলা ১১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়বে, যেটি দোহার স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটায় হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে কাতারে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি এবং তিনি অংশগ্রহণকারী দেশের কর্মকর্তা ও জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের কাছে কী বার্তা তুলে ধরবেন, তার বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্মেলনে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে সহজ উত্তরণের জন্য বৈশ্বিক সমর্থন চাইবে বলে আশা করা হচ্ছে। ৫ থেকে ৯ মার্চ দোহায় অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে এই গ্রুপের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে এটি ঢাকার শেষ অংশগ্রহণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে ফোরাম থেকে উত্তরণ পেতে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। তিনি এলডিসি ৫ সম্মেলনে তার অংশগ্রহণ ছাড়াও কাতারের আমিরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
৮ মার্চ পর্যন্ত কাতারে অবস্থানকালে কাতারের আমিরের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের কথা রয়েছে। জ্বালানি খাতে সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো আলোচনায় স্থান পাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি উইংয়ের মহাপরিচালক সেহেলি সাবরিন বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, বিশ্ব মন্দা ও কোভিড-১৯ প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে এখন স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য বাণিজ্য সুবিধাগুলো ২০২৬ সালের পরও অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনা উন্নত দেশগুলোকে অনুরোধ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করবেন যে, এলডিসি ও উন্নয়নশীল দেশগুলো মহামারির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ উন্নত দেশগুলোর তুলনায় তাদের অর্থনীতিকে বেশি বিপর্যস্ত করেছে।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ব্যাখ্যা করবেন যে, কীভাবে মহামারি এবং যুদ্ধ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মন্থর এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।’
কোন দিনে কী কর্মসূচি
৪ মার্চ, শনিবার
বিকেলে কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) প্রেসিডেন্ট সাবা করোসি এবং ইউএনডিপি প্রশাসক আচিম স্টেইনারের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
৫ মার্চ, রোববার
প্রধানমন্ত্রী কিউএনসিসিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে সম্মেলনের উদ্বোধনী পূর্ণাঙ্গ সভায় বক্তৃতা করবেন। পরে তিনি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে, বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক জাতিসংঘ সম্মেলনের সেক্রেটারি জেনারেল রেবেকা গ্রিনস্প্যান এবং ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) মহাসচিব ডোরেন বোগদান-মার্টিনের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবেন। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী কিউএনসিসিতে বিনিয়োগ ও অংশীদারত্বের ওপর এলডিসি ৫ সম্মেলনে উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন।
যৌথভাবে বাংলাদেশ, লাওস ও নেপাল আয়োজিত ‘২০২১ সালের উত্তরণের জন্য টেকসই ও সহজ রূপান্তর’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা দেয়ার কথা রয়েছে।
৬ মার্চ, সোমবার
ওই দিন শেখ হাসিনা সেন্ট রেজিস দোহায় ‘দ্য রাইজ অফ বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়াল অফ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি ব্যবসায়িক শীর্ষ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেবেন। তিনি মালাবির প্রেসিডেন্ট ড. ল্যাজারাস ম্যাককার্থি চাকওয়েরার সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তিনি কিউএনসিসিতে ‘স্মার্ট ও উদ্ভাবনী সমাজের জন্য এলডিসিতে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ’ শীর্ষক একটি পার্শ্ব ইভেন্টে অংশ নেবেন। এ ছাড়াও তিনি আবাসিক স্থানে আঞ্চলিক দূত সম্মেলনে যোগ দেবেন।
৭ মার্চ, মঙ্গলবার
ওই দিন প্রধানমন্ত্রী বিশেষ অতিথি হিসেবে ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক সমন্বয়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের সংলাপে যোগ দেবেন। একই সঙ্গে ডেনমার্কের উন্নয়ন সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী ড্যান জর্জেনসেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং ‘সহজ ও টেকসই উত্তরণের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারত্ব: স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়া’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। পরে তিনি কাতারে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।
৮ মার্চ, বুধবার
ওই দিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার উদ্দেশে দোহা ছাড়বেন।