বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অর্থের বিনিময়ে শহীদ মিনার ব্যবহার: ‘পিছু হটল’ সিলেট সিটি করপোরেশন

  •    
  • ৪ মার্চ, ২০২৩ ১০:০৫

সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ বলেন, ‘আমি ফেসবুকে শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা দেখেছি, কিন্তু সিসিকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’

ব্যাপক সমালোচনার মুখে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। যদিও সিসিকের পক্ষ থেকে শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত বা সেটি বাতিলের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি, তবে শহীদ মিনার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এটি নিশ্চিত করেছে।

সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে সিটি করপোরেশন। প্রায় প্রতিদিনই এখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান হয়। বিশেষত প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য শহীদ মিনার চত্বর ব্যবহার করে থাকে।

শহীদ মিনার ব্যবহারের জন্য সিসিক থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হলেও এর জন্য কোনো ফি দিতে হয় না। বিনা মূল্যেই এই চত্বর ব্যবহার করা যায়।

মার্চ থেকে শহীদ মিনার চত্বর ব্যবহারে ফি নির্ধারণ করছে সিলেট সিটি করপোরেশন, এমন খবর নগরে ছড়িয়ে পড়ে এর কয়েক দিন আগে। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বুধবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়।

জাসদ, বাসদ, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার পর বিনা মূল্যে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র কর্তৃক সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অর্থের বিনিময়ে বরাদ্দের দেয়ার বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

‘সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র কর্তৃক অর্থের বিনিময়ে শহীদ মিনার বরাদ্দের দেয়ার চিন্তা উদ্ভট, রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত করার স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচায়ক ও শহীদ মিনারের চেতনা পরিপন্থি।’

বিবৃতিতে নেতারা সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অর্থের বিনিময়ে বরাদ্দের দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রতিহতের জন্য সিলেটের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের প্রতি আহ্বান জানান।

এ ছাড়া ফেসবুকে সিলেটের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতারা এমন খবর প্রচার করে তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিজেদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানের জন্য শহীদ মিনার বরাদ্দ নিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি সিটি করপোরেশনে লিখিত আবেদন নিয়ে যান কমিউনিস্ট পার্টির সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাছান। তার কাছেই সিসিক কর্মকর্তারা ১ মার্চ থেকে শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি দিতে হবে বলে জানান।

বৃহস্পতিবার খায়রুল হাছান বলেন, ‘বরাদ্দের জন্য আবেদন জমা দিলে আমাকে জানানো হয়, ১ মার্চ থেকে শহীদ মিনার ব্যবহারে ১ হাজার টাকা ফি ও ১৫০ টাকা কর দিতে হবে। ব্যাংকের মাধ্যমে এই টাকা জমা দিতে হবে। সিসিক মেয়র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে আমাকে জানানো হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের কোনো শহীদ মিনার ব্যবহারেই টাকা লাগে না। এটি উন্মুক্ত স্থান। আমাদের এখানে ফি নির্ধারণ করা হবে কেন?’

খায়রুল হাছানের মাধ্যমেই শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি নির্ধারণের তথ্য ছড়িয়ে পড়ে ও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে সে সময় যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ বলেন, ‘আমি ফেসবুকে শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা দেখেছি, কিন্তু সিসিকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’

শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি নির্ধারণের একটি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত সিসিক নিয়েছিল বলে জানান সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত। সিলেট শহীদ মিনারে বিভিন্ন জাতীয় দিবসের আয়োজনে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ।

রজতকান্তি গুপ্ত বলেন, ‘বৃহস্পতিবার মেয়র ফোন দিয়ে আমাকে বলেছেন, শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি নির্ধারণের চিন্তাভাবনা করছেন তারা। এ ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে বসতে চান, তবে আমি এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। এমনটি হলে আমরা আন্দোলনে নামার কথাও জানিয়েছি। পরে মেয়র আমাকে বলেছেন তারা কোনো ফি নির্ধারণ করবেন না।’

একই তথ্য জানিয়ে সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আল আজাদ বলেন, ‘শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি নির্ধারণ করতে চেয়েছিল সিটি করপোরেশন। আমি এর প্রতিবাদ করেছি। বৃহস্পতিবার মেয়র জানিয়েছেন তারা এখন এমন সিদ্ধান্ত নেবেন না।’

শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি নির্ধারণ করা হলে মানুষজনকে শহীদ মিনার বিমুখ করা হবে জানিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য এনামুল কবির বলেন, ‘আমি বিভিন্নজনের মুখে ও ফেসবুকে এমন কথা শুনেছি, তবে সিটি করপোরেশন আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি।

‘শহীদ মিনার ব্যবহারের জন্য ফি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সেটা খুবই খারাপ হবে। অবশ্যই আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব।’

এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১১ মার্চ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিচালনাবিষয়ক সভা ডেকেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে ওই দিন বেলা ১১টায় নগর ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এ বিভাগের আরো খবর