সহকারী আবহাওয়াবিদ পদে চারজনকে নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
আদেশপ্রাপ্তির ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ আদেশ প্রতিপালন করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মাহমুদুল হক ও বিচারপতি মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন মো. কায়সারুজ্জামান। তার সঙ্গে ছিলেন মো. আব্দুর রহিম, সাফফাত হোমায়রা ও শেখ কানিজ ফাতেমা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাসুদ রুমি।
৩৫তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার দুই বছরেও নিয়োগ না দেয়ায় ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই সুপারিশপ্রাপ্ত আরিফুল হাসান, জিহাদ আলী, উজ্জল হোসেন ও তানজিমা আফরিন রিট করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৮ আগস্ট রুল জারি করে আদালত।
রুলে রিটকারী চারজনকে কেন দ্রুত নিয়োগের নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ পাঁচজনকে জবাব দিতে বলা হয়।
ওই রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে বৃস্পতিবার রুলটি যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এতে রিটকারী চারজনসহ সুপারিশপ্রাপ্ত ১১ জনকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে নিয়োগ দিতে বলা হয়।
রিটকারীদের আইনজীবী মো. কায়সারুজ্জামান বলেন, ‘৩৫তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে নন-ক্যাডারে সহকারী আবহাওয়াবিদ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। এরপর তাদের প্রত্যেকের মেডিক্যাল চেকআপ, পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ অন্যান্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও শুধু একটি নিয়োগবিধির দোহাই দিয়ে তাদের নিয়োগটা আটকে যায়, যেখানে তারা একই সময়ে একই পোস্টে অন্য তিনজনকে নিয়োগ দেয়। অথচ তাদের নিয়োগ দেয়া হয়নি। এটি আমরা আদালতে বলেছি। আদালত শুনানি নিয়ে আজ এ রায় দিয়েছেন।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাসুদ রুমী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রুল শুনানি করে আদালত রুলটি আজকে যথাযথ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন। রিটকারীদের নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। যে আইন বাতিলের কারণে তাদের নিয়োগ আটকে গেছে, সেই আইনের অধীনেই একসময়ে তিনজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই গ্রাউন্ডে আদালত তাদের নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।’
এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রায়ের বিষয়টি আমরা আবহাওয়া অধিদপ্তরকে জানাব। এখন তারা সিদ্ধান্ত নেবেন আপিল করবেন কি না।’
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ৩৫তম বিসিএসে উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে ২০১৭ সালে ৩৯৮ জনকে প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডারের বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (বিপিএসসি)। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে নিয়োগের জন্য এই প্রার্থীদের সুপারিশ করেছিল পিএসসি। এর মধ্যে ১১ প্রার্থীকে আবহাওয়া অধিদপ্তরে সহকারী আবহাওয়াবিদ হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়।
৩৫তম বিসিএসে সুপারিশ পাওয়া ১১ প্রার্থীর মধ্যে কয়েকজন ৩৬, ৩৭ ও ৩৮তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে নন-ক্যাডারের জন্য তালিকাভুক্ত হন, কিন্তু পিএসসির নিয়ম অনুযায়ী একবার প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলে পরবর্তীকালে আর আবেদন করা যায় না। তাই পিএসসি তাদের আর নতুন করে কোনো পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেনি। আবহাওয়া অধিদপ্তরে পাঁচ বছরেও নিয়োগের সুরাহা না হওয়ায় হতাশায় দিন কাটছে তাদের।
রিটকারী উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘সুপারিশপ্রাপ্ত অন্যান্য পদের প্রার্থীদের সঙ্গে ২০১৭ সালেই আমাদের ১১ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়েছিল। পুলিশ ভেরিফিকেশন ইতিবাচক ছিল, কিন্তু ছয় বছরেও নিয়োগ পাইনি, যে কারণে আমরা চারজন রিট করি।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি সামরিক সরকারের আমলে তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালতের রায়ে সেই নিয়োগবিধি বাতিল হয়। এরপর আর নতুন কোনো নীতিমালা তৈরি করা হয়নি।