নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার চার সদস্যকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৭।
গ্রেপ্তার আল আমিন ওরফে মিলদুকের কাছ থেকে উদ্ধার করা মোবাইলে হিন্দাল শারক্বীয়ার আমির আনিছুর রহমান এবং দাওয়াতি শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মাইমুনের সদস্য ও অর্থ সংগ্রহবিষয়ক এবং উগ্রবাদী বক্তব্যের একটি ভিডিও কন্টেন্ট উদ্ধার করা হয়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বৃহস্পতিবার দুপুরে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভিডিওর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গত ২২ জানুয়ারি এই সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রণবীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার মোবাইল ফোন থেকে ৮ মিনিট দৈর্ঘ্যের একটি ভিডিও উদ্ধার করা হয়। ভিডিওতে মোট ২৯ জন জঙ্গিকে শনাক্ত করা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি উদ্ধার হওয়া ৭ মিনিট দৈর্ঘ্যের ভিডিওতে আরও ২৩ জন জঙ্গিকে শনাক্ত করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ২৩ জনের মধ্যে ১৯ জন জঙ্গি ২২ জানুয়ারি উদ্ধার হওয়া ভিডিওতেও ছিলেন। এই ভিডিওতে নতুন করে আরও ৪ জন জঙ্গির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তারা হলেন শেখ আহমেদ মামুন ওরফে রমেশ, শামিম মিয়া ওরফে বাকলাই ওরফে রাজান, নিজাম উদ্দিন হিরণ, ডা. জহিরুল ইসলাম ওরফে আহমেদ (ভিডিওর তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের ৬ জুন আহমেদের মৃত্যু হয়)।’
র্যাবের পর্যালোচনা বলছে, গত ২৩ জানুয়ারি প্রকাশিত ভিডিও এবং বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ভিডিওতে মোট শনাক্ত জঙ্গিদের মধ্যে র্যাব ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। দুটি ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড ভয়েস দিয়েছেন আল আমিন ওরফে বাহাই (নারায়ণগঞ্জ থেকে নিখোঁজ রিয়াসাত রায়হানের প্রাইভেট টিউটর)। ভিডিও এডিটিং করেছেন পাভেল।
ভিডিওটির এডিট ও ভয়েসের বিষয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নিখোঁজ তরুণ আবু বক্করের মা আম্মিয়া বেগম ছেলের সন্ধান চেয়ে আকুতি জানিয়েছিলেন। সেই আবু বক্কর তারই শিক্ষক আল আমিনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ান। এই ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে আল আমিনের ভয়েস ব্যবহার করা হয়।
‘ভিডিওটি এডিট করেন আরেক জঙ্গি নিখোঁজ তরুণ পাভেল, যিনি বাড়ি ছাড়া ৫৫ জনের তালিকায় রয়েছেন। এই ভিডিও তৈরির উদ্দেশ্য ছিল অর্থ সংগ্রহ ও সদস্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেয়া।’
জঙ্গি সংগঠনটির তৈরি করা ভিডিও কতদূর ছড়িয়েছে জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘আমরা গ্রেপ্তার চারজনের মোবাইল থেকে চারটি ভিডিও পেয়েছি, যা গত বছরের ২৯ নভেম্বর তাদের কাছে এসেছে, তবে ভিডিওটি তাদের নিজেদের মধ্যেই ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ায়নি।
‘আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি ভিডিওটির কাজ চলমান ছিল। ভিডিওটি নিজেদের মধ্যেই ছিল। অভিযান শুরু হওয়ায় কাজ শেষ করতে পারেনি।’
এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে জানতে চাইলে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমাদের অভিযানে সংগঠনটির অর্থ শাখার উপপ্রধানসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমরা যে তথ্য পেয়েছি এতে তাদের ডোনার শাখার একাধিক শাখা ছিল। দেশে ও বিদেশে তাদের বেশকিছু ডোনার সদস্য রয়েছেন। মূলত সংগঠনটির সদস্যরা মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সামাজিক ভালো কাজে অর্থ খরচ করার নামে তারা এই অর্থ সংগ্রহ করেন।
‘আমাদের অভিযানে অর্থ শাখার হাবিবুল্লাসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের সময়ে সাত লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়, যে টাকা তারা কুকি চিন থেকে পেয়েছিল অস্ত্র কেনার জন্য। তারা এই অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তি ও স্বজনদের কাছ থেকে মানবিক কাজের জন্য সংগ্রহ করেছিলেন, পরে যা অস্ত্র কেনাসহ নিজেদের বিভিন্ন প্রস্তুতির জন্য খরচ করছিলেন।’
র্যাব জানায়, কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নিজেদের স্বার্থেই হিন্দাল শারক্বীয়াকে আশ্রয় ও রসদ দিয়েছে। কেএনএফের সশস্ত্র সদস্য প্রায় ২০০। সেখানে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তারা অবস্থান করেছে। এতে তাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধি হয়েছে। এর বাইরে কোনো স্বার্থ রয়েছে কি না, সেটি তদন্ত করতে হবে।