রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় আসামিদের রিভিউ আবেদন বৃহস্পতিবার খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।
এর মধ্য দিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির সাজা কার্যকরে কোনো আইনি বাধা আর থাকল না।
এ নিয়ে সাংবাদিকরা অনুভূতি জানতে চান খুন হওয়া অধ্যাপকের স্ত্রী সুলতানা আহমেদের কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘অনুভূতি আর কী হবে। ১৭ বছর। ১৭ বছরে তো অনেক দুঃখ, জ্বালা-যন্ত্রণা, কষ্ট ভোগ করলাম। ভোগ করতে করতে আমরা শেষ হয়ে গেছি। অনুভূতি আর কী থাকবে।
‘হ্যাঁ, রিভিউ খারিজ হয়ে গেছে, কিন্তু ওই যে রায় কার্যকর। আমরা তো সবকিছু হারিয়ে ফেলছি। ড. তাহেরকে তো আর কোনোদিন ফিরে পাব না। যে খুনি, খুনির দল, তারা তো আমার স্বামীকে নির্মমভাবে, হিংস্রভাবে, বর্বরোচিতভাবে নির্যাতন করে খুন করেছে, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। মানুষ যে মানুষকে এভাবে খুন করতে পারে, আমার ধারণার বাইরে।’
আপিল বিভাগের রায়ের পর চাওয়া নিয়ে জানতে চাইলে সুলতানা আহমেদ বলেন, ‘এখন আমাদের চাওয়া আর কী? এ রায় যাতে দ্রুত কার্যকরী হয়, সেটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া।’
মামলার আদ্যোপান্ত
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন।
পদোন্নতিসংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে হত্যার শিকার হন অধ্যাপক তাহের। তাকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেয়।
বিচারিক আদালতে দণ্ডিতরা হলেন রাবির ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সম্বন্ধি আব্দুস সালাম।
খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।
২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন।
হাইকোর্টে শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয় হাইকোর্ট।
ফাঁসির দণ্ড হাইকোর্টে বহাল থাকা দুই আসামি হলেন রাবির সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর।
ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া দুই আসামি হলেন নাজমুল আলম ও আবদুস সালাম।
হাইকোর্টের রায়ের পর আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করেন। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামির দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
শুনানি শেষে গত বছরের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে।
গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়। ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন করেন আসামিরা। সেই রিভিউ আবেদন শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
এ রায়ের ফলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা কার্যকরে আর কোনো আইনি বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী ও অধ্যাপক তাহেরের মেয়ে সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ।