বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমানকে থাপ্পড় ও জবরদস্তি গাড়িতে তুলে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে খুলনা-মাওয়া মহাসড়কের কাঁঠালতলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
আহত অবস্থায় তিনি ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। চোখ ও কানে গুরুতর আঘাত থাকায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আহত মো. মিজানুর রহমান ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের দু’বারের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কাঁঠালতলা এলাকায় থাকা একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, খুলনা-মাওয়া মহাসড়ক দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িটি ফলতিতার দিকে যাচ্ছিল। মাত্র ৩ সেকেন্ডের ব্যবধানে গাড়িটি পেছন দিকে আসে। তখন পাশের রাস্তা থেকে উঠে আসা মিজানুর রহমানের মোটরসাইকেলের সঙ্গে ইউএনও’র গাড়ির সামান্য ঘষা লাগে।
প্রথমে গাড়িচালক তার আসন থেকে নেমে আসেন। পরে ইউএনও গাড়ি থেকে নামেন এবং মো. মিজানুর রহমানকে সজোরে থাপ্পড় মারেন। পরে আহত মিজানুরকে জোরপূর্বক গাড়ির পেছনে তুলে নিয়ে চলে যান ইউএনও।
জাহিদুল ইসলাম নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘প্রথমে গাড়িচালক নেমে এসে মিজানুর রহমানকে ধমকায়। পরে ইউএনও গাড়ি থেকে নেমে মিজানুর রহমানকে থাপ্পড় মারেন।’
আহত মিজানুর রহমান বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলযোগে গরুর ফার্মে যাচ্ছিলাম। কাঁঠালতলা মোড় এলাকায় পৌঁছলে দ্রুতগতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িটি ব্যাকে (পেছনে) আসে। তখন ইউএনও-র গাড়ির সঙ্গে আমার মোটরসাইকেলের সামান্য ধাক্কা লাগে। সঙ্গে সঙ্গে ইউএনও-র গাড়িচালক নেমে এসে আমাকে গাড়িতে উঠতে বলে।
‘গাড়িতে না উঠলে, ইউএনও গাড়ি থেকে নেমে এসে আমাকে থাপ্পড় মারেন। পরে ধাক্কা দিয়ে গাড়ির পেছনে উঠান এবং গালিগালাজ করেন। গাড়িতে করে কয়েক কিলোমিটার নিয়ে এক পর্যায়ে আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘পরে আমি ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। চিকিৎসক আমাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নাক-গান-গলা বিশেষজ্ঞ দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এ ঘটনায় বিচার চাওয়ার মতো ভাষা আমার নেই।’
এদিকে উপজেলার প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক জনপ্রতিনিধিকে মারধরের খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইউএনও-র কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন তারা।
ফকিরহাট উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি খান মোহাম্মাদ আরিফুল হক বলেন, ‘ইউএনও মো. মনোয়ার হোসেন এর আগেও একাধিক নাগরিককে লাঞ্ছিত করেছেন। তাকে বহিষ্কার বরে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি আমরা।’
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন। ছবি: সংগৃহীতউপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রত্যয় দাস বলেন, ‘মিজানুর রহমান বেশ অসুস্থ এবং মুখ-কান ফোলা থাকায় তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’
থাপ্পর মারার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তাকে কথা বলার জন্য গাড়িতে উঠানো হয়েছে। পরিচয় জানার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ‘সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যে একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে বিষয়টি মীমাংসার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’