জীবন বদলে গেছে শার্শার ভূমিহীন ১৮৮ পরিবারের সদস্যদের। সারা জীবনের চেষ্টায় যারা মাথা গোজার মত এক টুকরো ভূমি সংগ্রহ করতে পারেনি, আজ তারা সম্পদশালী হতে স্বপ্ন দেখছে। আর এ স্বপ্ন দেখা সম্ভব হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়ার পর।
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়ার পর তারা আজ স্বাবলম্বী। ঘরের পাশেই তারা গড়ে তুলেছে, সবজির মাচা, গরু-ছাগল পালনের জন্য করেছে গোয়াল ঘর। খালি জমিতে বেগুন, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের শাক। এ সবুজের সমাহার জানান দিচ্ছে যে, তারা ঘর ও ভূমি পেয়ে স্বাবলম্বী হতে শিখছে।
শার্শা উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে প্রায় ৯ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে উলাশী বাজারের পার্শ্ববর্তী খালধারে আশ্রয়ণের সারি সারি ঘর, যা দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এখানে গড়ে উঠেছে ভূমিহীনদের বসতি, আর খালধারে গড়ে উঠেছে সবুজের সমাহার। রয়েছে হাঁস-মুরগি আর গবাদি পশু পালনের সুব্যবস্থা।
এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে খেলছে শিশু-কিশোরের দল। পুরুষরা ছুটছেন দৈনন্দিন কাজে। নারীদের কেউ কেউ ব্যস্ত হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগলের কাজ নিয়ে আর নিজ আঙ্গিনায় গড়ে তোলা সবজি বাগানের পরিচর্যা নিয়ে।
ছিন্নমুল মানুষের যেন এক খন্ড শান্তির নীড়। এই নীড়েই সুখের স্বপ্ন গড়েছেন সহায়-সম্বলহীন একদল নারী-পুরুষ।
খালধারের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা রাসেল আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই পল্লীতে ১৭টিসহ উপজেলায় ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের শান্তির বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ১৮৮। আরও ৭৬টি স্বপ্নের নীড় রয়েছে নির্মানাধীন। এ সকল আশ্রয়ণে তাদের জীবনের শুরুটা ভূমিহীন হলেও এখন তারা আর ভূমিহীন নয়। মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীনদের বসবাসের জন্য শুধু ঘর নয় সরকারি ২ শতক জমিও প্রদান করেন।
এ ছাড়া শিক্ষার ছোঁয়াও লেগেছে তাদের মধ্যে। আশ্রয়ণে বসবাসরত শতাধিক ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। উলাশী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫০০ গজের মধ্যেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। ফলে এ আশ্রয়ণে শিক্ষার প্রভাবও পড়েছে। এতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছেলে মেয়েরা শিক্ষারও সুযোগ পাচ্ছে।
সরেজমিনে উলাশী আশ্রয়নে গিয়ে দেখা যায়, ছোট পরিসরে আদর্শ ছিমছাম সারি সারি ঘর।
ভাড়ার রিকশাভ্যান চালক থেকে নিজে মৎস ব্যবসায়ী হয়েছেন জসিম হোসেন। যে টাকা ভাড়া দিতেন সে টাকা ভবিষ্যতের জন্য সবাই মিলে সঞ্চয় করছেন। অনেকে নিজেদের সুবিধামতো ঘরের সঙ্গে পাওয়া জমিতে নানা ধরণের স্থাপনাও তৈরি করে নিয়েছেন। তিনি ভ্যানরিকশা ছেড়ে দিয়েছেন মাছের দোকান।
উলাশী আশ্রয়নের বাসিন্দা জসিম হোসেন বলেন, ‘আগে আমরা অন্যের জায়গায় ছোট ভাঙা ঘরে থেকে ৩টি শিশু সন্তান নিয়ে শীত-বৃষ্টি মৌসুমে লড়াই করে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করতাম। সরকার আমাদের নতুন ঘর দেয়ায় এখন আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্তায় ঘুমাতে পারছি। আগের মতো কষ্ট আর নেই।’
বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু জানান, ইতোমধ্যে যারা ঘর পেয়েছেন তারা স্বাচ্ছন্দে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনযাবন করছেন। এ ছাড়াও করোনাকালে এ সকল দরিদ্র মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কোনো ভূমিহীন, গৃহহীন যেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের একজন মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না।
এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন অত্যন্ত আন্তরিকভাবে অশ্রয়ণে- ২ প্রকল্পের মাধ্যমে এ উপজেলায় প্রকৃত ভৃমিহীন ও গৃহহীনদের যাচাই-বাচাই করে মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উপহার হিসাবে গৃহনির্মাণ করে দিয়েছেন। এতে ঠিকানাবিহীন মানুষগুলো রঙিন ঘরে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।
তিনি আরও জানান, তাদেরকে স্বাবলম্বী করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এতে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসছে।