বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দামে লোকসানে মেহেরপুরের পেঁয়াজ চাষিরা

  • প্রতি‌নি‌ধি, মেহেরপুর   
  • ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১২:১৫

কৃষি বিভাগের তথ‍্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় সুখ সাগর সহ অনান্য জাতের প্রায় ২৭শ হেক্টর জমিতে পেয়াঁজ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সুখ সাগর জাতের পেয়াঁজ বেশি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৭ হাজার টন। আক্টোবর মাসে বপন করে ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে সংগ্রহ করা যায় এ পেয়াঁজ। বিঘা প্রতি খরচ হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পযর্ন্ত।

কৃষি প্রধান এলাকা মেহেরপুর। এই জেলার অধিকাংশ মানুষজন জীবিকা নির্বাহ করে কৃষি কাজ করেই। পেঁয়াজের চলতি ভরা মৌসুমে দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছে মেহেরপুরের পেঁয়াজ চাষিরা।

কৃষকদের অভিযোগ, পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে হঠাৎ করে তুলনামূলক কম দামে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় বাজার পড়ে গেছে। এতে তাদের লোকসানে পড়তে হচ্ছে।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, চাষিদের লোকসানের কথা ভেবে কৃষি বিভাগ থেকে মন্ত্রালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে যাতে এই সময়টাতে এলসি বন্ধ করে রাখা হয়।

মেহেরপুরের গাংনী, মুজিবনগর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন মাঠ জুড়ে এখন ভারতীয় জাতের সুখ সাগর পেঁয়াজ ক্ষেত। মাঠে মাঠে চলছে পেঁয়াজ সংগ্রহের কাজ। এখানকার উৎপাদিত সুখ সাগর পেয়াজের পুরোটায় চলে যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

ফলন ভালো হওয়ায় অন্যান্য ফসলের চেয়ে পেয়াজ চাষে লাভবান হয় কৃষকরা। এক বিঘা জমিতে সুখ সাগর জাতের পেয়াঁজের ফলন হয় দেড়শ থেকে একশ আশি মণ পযর্ন্ত। কিছুদিন আগেও প্রতিমন পেয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। কিন্তু বতর্মান সময়ে ভারত থেকে পেয়াজ আমদানি করায় স্থানীয় বাজারে পড়ে গেছে পেয়াজের দাম। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা, যা উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম। তারপর পেঁয়াজ কেনার ব্যবসায়ীরা আসছে না। দ্রুত সময়ে পেঁয়াজ বিক্রি করতে না পরলে লোকসানে পড়বে হাজার হাজার চাষি।

কৃষি বিভাগের তথ‍্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় সুখ সাগর সহ অনান্য জাতের প্রায় ২৭শ হেক্টর জমিতে পেয়াঁজ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সুখ সাগর জাতের পেয়াঁজ বেশি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৭ হাজার টন। আক্টোবর মাসে বপন করে ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে সংগ্রহ করা যায় এ পেয়াঁজ। বিঘা প্রতি খরচ হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পযর্ন্ত।

জেলার মুজিবনগর উপজেলার পেঁয়াজ চাষি কালু মিয়া বলেন, ‘পেঁয়াজ তোলার মতো হয়ে গেছে কিন্তু পাটি পাচ্ছি না। দাম কম বিক্রি হচ্ছে না। চাষিদের অনেক লোকসান হবে। এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে ৫০ হাজার টাকা খরচ, পাটি নাই। আমরা এখন লোকসানে আছি। প্রতিবছরই আমাদের পেঁয়াজে আবাদ নষ্ট করার জন‍্য ভরা মৌসুমে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত কম দামে পেঁয়াজ ছাড়ে।’

জেলার গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের পেঁয়াজ চাষি জনিরুল বলেন, ‘এখন বর্তমান পেঁয়াজের বাজার চলছে ৫৪০ টাকা বাজার। এই দামে পেয়াজ বিক্রি করলে ৪৫ থেকে ৪৭ হাজার টাকা হবে। এতে আসল থেকে ঘাটতি যাবে। অন্যান্য বছর দাম ভালো পাই এক বিঘাতে ১ লাখ টাকাও হয়। এ বছর লোকসান বাজার পড়ে যাওয়ায়। তবে এলসি না খুললে পেঁয়াজে লোকসান হত না।’

সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের পেঁয়াজ চাষি রাইহান আলী বলেন, ‘আমাদের পেঁয়াজ এখন মাঠে উঠতে লেগেছে। সরকার যদি এলসি বন্ধ করত, তাহলে চাষিরা ভালো দাম পাইত। চাষিরা যত বেশি লাভবান হবে, ততো বেশি নতুন নতুন চাষি তৈরি হবে। বেশি চাষি পেঁয়াজ চাষ করলে একটা সময় আমদানি করা কমে যাবে। আর এলসি বন্ধ না করায় চাষিরা লাভের পরিবর্তে লোকসানের মধ্যে পড়ছে।’

একই এলাকার চাষি হারু মিয়া বলেন, ‘তেল সারের দাম ধরে পেয়াজ চাষ করেছি। আমাদের লোকসান ছাড়া লাভ হইছে না। ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দাম চলছে, তাও পাটি পাইছি নি। আমাদের পেয়াজ নষ্ট হইয়ি যাওয়ার ভাব।’

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, ‘মেহেরপুরে সুখসাগরও তাহেরপুরি জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ফলনও ভালো। সুখ সাগর পেঁয়াজ ওঠা শুরু করেছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৭৭ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে আশা করছি। যখনি কোনো ফসল উঠা শুরু করে তখনি দাম কমে যায়, এতে চাষিরা লোকসানে পড়ে যায়।’

কৃষি বিভাগ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ দিয়ে অনুরোধ করেছি যাতে এলসিটা আপাতত বন্ধ করে রাখা হয়। এলসি বন্ধ রাখলেই চাষিরা পেয়াজের দাম ভালো পাবে।

এ বিভাগের আরো খবর