বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভবনের এক ফুট দূরত্বে ডিপিডিসির মরণ ফাঁদ

  •    
  • ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ২১:১৭

শিশু আরিসার মা তামান্না আকতার বলেন, ‘তিন/চার দিন হলো সার্জারি হয়েছে মেয়েটার। বাঁ হাতের কব্জি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে। দুই/একদিনের মধ্যে আরেকটি সার্জারি হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের অবহেলার কারণে আমার মেয়ে আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।’

ছয় বছরের শিশু আরিসা আকতার। পরিবারের সঙ্গে থাকে রাজধানীর নয়াপল্টনে। আর বাসাবো ৫/১/সি নম্বর হোল্ডিংয়ের বহুতল ভবনের তিন তলায় নানার বাসা। ১৭ ফেব্রুয়ারি পরিবারের সঙ্গে শিশুটি বেড়াতে যায় নানার বাসায়।

নানার বাসায় এই বেড়াতে যাওয়াটাই শিশুটির জন্য অভিশাপ হয়ে এসেছে। জীবনের শুরুতেই ওকে হারাতে বাম হাত। কেটে ফেলতে হয়েছে হাতের ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত। বাসার বারান্দা ঘেঁষে বিদ্যুৎ বিভাগের ‘পেতে রাখা ফাঁদ’ পঙ্গু করে দিয়েছে চিরদিনের জন্য।

বাসাবোর ওই বাড়ির এক ফুট দূর দিয়ে টানানো আছে বিদ্যুতের মূল সরবরাহ লাইন। শুরু তাই নয়, সামান্য দূরত্বেই বসানো আছে ট্রান্সফরমার। কিছুদিন আগে পর্যন্ত ওই ট্রান্সফরমার অবশ্য বারান্দার সামনেই ছিল। অনেক দেরদরবার আর আবেদন-নিবেদনের পর সেটি করিয়ে দুই ভবনের মাঝামাঝি স্থানে নিয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)।

ওই সরবরাহ লাইনে কোনো কভারও ছিল না। আরিফার নানা ও অন্য কয়েকজন বাড়ির মালিক নিজেদের উদ্যোগে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে তারে কভার লাগানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু সরবরাহ লাইনের কাজ করতে এসে সেই কভারও খুলে নিয়ে গেছেন ডিপিডিসির কর্মীরা।

প্রাণোচ্ছ্বল আরিসা আকতার; বিদ্যুতায়িত হয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন শিশুটি (ডানে)। ছবি: নিউজবাংলা

ঘটনাটি ১৭ ফেব্রুয়ারির। শিশু আরিফার বাবা আরমান আকতার শ্বশুরালয়ে এসে জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে যান। আর বাবার ফেরার অপেক্ষায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে গ্রিলে হাত রেখে দাঁড়িয়ে ছিল সে। এ সময় অনতিদূরে থাকা ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হয়। আর সরবরাহ লাইনের তার ছিঁড়ে এসে পড়ে লোহার গ্রিলের ওপর। মুহূর্তে বিদ্যুতায়িত হয়ে শিশুটি জ্ঞান হারিয়ে বারান্দায় লুটিয়ে পড়ে।

ওই সময় মসজিদ থেকে ফিরছিলেন আরমান আকতার। তিনি দৌড়ে উপরে উঠে আসেন। দ্রুত আরিফাকে নেয়া হয় পাশের মুগদা জেনারেল হাসপাতালে। সেখান থেকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পরে ওকে ভর্তি করা হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।

বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসার এক পর্যায়ে আরিসার বাম হাতের কবজি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে। এখনও ওর চিকিৎসা চলছে।

আরমান আকতার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৩০ হাজার টাকা খরচ করে তারে যে কভার লাগানো হয়, এই কভার কয়েকদিন আগে বিদ্যুতের লোকেরা কাজ করতে এসে খুলে নিয়ে গেছে। পরে কভারের জায়গায় গুনা পেঁচিয়ে রেখে যায়। এই দুর্ঘটনার পর ওরা এসে আবারও সেই গুনা পেঁচিয়ে রেখে গেছে। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের ওই অংশ এখনও বিপজ্জনক অবস্থায় রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘বার্ন ইনস্টিটিউটে বৃহস্পতিবার আমার মেয়েটার বাম হাত অপারেশন করে আঙুল থেকে আট ইঞ্চি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে। এছাড়া মুখ ও পায়ের অনেক অংশ পুড়ে যাওয়ায় এখনও ওর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

‘বিদুৎ বিভাগের এই অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে আমরা সবুজবাগ থানার ওসির কাছে গিয়েছিলাম। থানা থেকে বলেছে বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ করে কোর্টে যেতে। কোর্টে অভিযোগ দিতে হবে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরিফার মা তামান্না আকতার বলেন, ‘তিন/চার দিন হলো সার্জারি হয়েছে মেয়েটার। দুই/একদিনের মধ্যে আরেকটি সার্জারি হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের অবহেলার কারণে আমার মেয়ে আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।’

বাসার এক ফুট দূরত্ব দিয়ে কেন মেইন লাইনের খোলা তার নেয়া হবে- এমন প্রশ্ন আরিফার মায়ের।

সবুজবাগ থানার ওসি মুরাদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভিকটিমের বাবা থানায় এসেছিলেন জিডি করতে। আমি বলেছি বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ দিয়ে থানায় আসতে। পরে আর তারা থানায় আসেনি।’

ডিপিডিসি’র বাসাবো এলাকার দায়িত্বে থাকা এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মো. সাইফুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি অতো বেশি অবগত নই। একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল জানি। পরবর্তীতে কী হয়েছে আমি জানি না।’

বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে কাজ করতে গিয়ে তারের কভার খুলে নিয়ে আসার পরে সেটা কেন পুনরায় লাগানো হয়নি- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘শিশু আহত হওয়ার বিষয়টি আমি আপনার কাছ থেকেই জানলাম। আমার নলেজে এলে আমি ব্যবস্থা নিতাম। আমি এইমাত্র শুনলাম আপনার কাছ থেকে। এখন ব্যবস্থা নেব।’

এ বিভাগের আরো খবর