মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী নামের ওই ব্যক্তি মামলার পর ১০ বছর এবং মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানিয়েছে বাহিনীটি।
রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে রোববার রাতে র্যাব-৩-এর একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ১৯৭১ সালে গঠিত ইসলামী ছাত্র সংঘের অন্যতম সংগঠক এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানা জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। এ ছাড়াও তিনি শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে এলাকায় লুটপাট ও বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাতেন।
র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন খান টিকাটুলিতে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, কামারজানি আর্মি ক্যাম্পে হত্যাকাণ্ডের শিকার আকবর আলীর ছেলে আনিছুর রহমান বাদী হয়ে ২০১৩ সালে গাইবান্দা আদালতে আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী, আবদুর রহিম, আবু সালেহ, আবদুল লতিফ, রুহুল আমিন, নাজমুল হুদাকে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আসামি করে মামলা করেন।
পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালীন কখনোই আদালতে হাজির হননি মোহাম্মদ আলী। মামলার পর ২০১৩ সাল থেকেই তিনি নিজ এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। এরপর গভীর তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতিটি অভিযোগ প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রমাণ হলে ২০১৭ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়।
এই মামলার অভিযুক্ত অপর ৫ জন আসামির মধ্যে বর্তমানে একজন জর্ডানে, একজন কারাগারে, দুজন পলাতক রয়েছে। একজন আসামি পলাতক অবস্থায় মারা যান।
পলাতক জীবন
র্যাব জানায়, মামলার পর ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মোহাম্মদ আলী সুন্দরগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিল। ২০১৫ সালে জামিনের আবেদন করলে তার জামিন নাকচ করে আদালত। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে ২০১৬ সালে তিনি পালিয়ে গাইবান্ধার বেলকার চর নামক নির্জন একটি চরে গিয়ে আত্মগোপনে থাকেন। তখন তিনি দিনমজুরির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন।
২০২১ সালে ঢাকায় পালিয়ে এসে সাভারের আশুলিয়া এলাকায় একটি ভাড়ার বাসায় বসবাস শুরু করেন মোহাম্মদ আলী।
র্যাব আরও জানায়, এখানেও প্রথমে দিনমজুরি এবং পরে গৃহশিক্ষকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন মোহাম্মদ আলী। আত্মগোপনে থাকাকালীন তিনি ছদ্মনাম ব্যবহার করে নিজের পরিচয় দিতেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাজধানীর ডেমরা এলাকায় একটি বস্তিতে থাকা শুরু করেন মোহাম্মদ আলী। র্যাব সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।