কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগকারী প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটির ডাকে ক্যাম্পাসে আসছেন না।
ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি বক্তব্য শুনতে ফুলপরী খাতুন নামের ওই ছাত্রীকে রোববার ক্যাম্পাসে ডাকা হয়। তবে নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি এদিন আসবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
ফুলপরী খাতুন বলেন, ‘আমি যেতে চাচ্ছিনা। তাদের প্রয়োজন হলে তারা আমার বাড়িতে এসে বক্তব্য নিবে।’
এর আগে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সামনে অভিযোগের পক্ষে কথা বলতে তিনবার ক্যাম্পাসে যান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে তাকে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী।
তিনি অভিযোগে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তার অনুসারীরা নির্যাতন চালিয়েছেন। একপর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, মারধর, গালাগাল, হত্যার হুমকিসহ অমানবিক নির্যাতন করেন।
১৩ ফেব্রুয়ারি নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়িতে চলে যান ওই শিক্ষার্থী।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি কামরুল হাসান অনিক বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কার্যক্রম রোববার শেষ হবে। তদন্তের স্বার্থে বক্তব্য জানতে এদিন সকালে ভুক্তভোগীকে ডাকা হয়েছে। ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নিয়েই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে দিব। গত ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ এই তদন্ত কমিটি গঠন করেন।’
তবে, কমিটির সদস্য বনি আমিন বলেছেন, ‘এতোদিন তিনি আসলেন এখন নিরাপত্তার ইস্যু ধরে আসবেন না, এটা কেমন কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে আমরা জানিয়েছি। তারা নিরাপত্তা দিতে চেয়েছেন। এরপরও তিনি আসবেন না, এটা কেমন কথা প্রশ্ন তোলেন বনি।’
বনি আমিন বলেন, ‘আমরা তার গ্রামে গেলেও নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারি। যেহেতু ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাই গ্রামের মানুষ আমাদের কীভাবে নেবে তাতো বলা মুশকিল। সে কারণে আমরাও তার বাড়িতে যাচ্ছি না। আমরাও যাচ্ছি না, তিনিও আসলেন না সেক্ষেত্রে তদন্ত প্রতিবেদন কীভাবে দেয়া যায় তা নিয়ে আমরা পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
অন্যদিকে ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন শনিবার জমা দেয়া হয়নি। কিছু কাজ বাকি থাকায় প্রশাসনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি এই কমিটি। শনিবারও দিনব্যাপী ঘটনার নানান দিক খতিয়ে দেখতে তথ্য উপাত্ত নিয়ে পর্যালোচনায় বসেন এই কমিটি। গোপনীয়তা রেখে সাংবাদিকদের এড়িয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়কের কক্ষে না বসে বসেছিলেন কমিটির অন্য সদস্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মার কক্ষে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডল, সদস্য অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী, অধ্যাপক ড. মুর্শিদ আলম ও সদস্য সচিব একাডেমিক শাখার উপ রেজিস্ট্রার আলীবদ্দীন খান।
আলীবদ্দীন খান বলেন, ‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে কাজ শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আপাতত এর বেশি কিছু বলা যাবেনা।
আর কী পেয়েছে তদন্ত কমিটি এ প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মুর্শিদ আলম বলেন, ‘যেহেতু এটা একটা স্পর্শকাতর ইস্যু। তাই তদন্তের বিষয়ে কিছুই বলা যাবে না। তদন্ত কমিটির সবাইকে আহ্বায়ক নিষেধ করে দিয়েছেন।