যারা বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে এক করে দেখে তাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, দুই দল এক পর্যায়ের হয় কীভাবে? আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির তুলনা চলে না।
শনিবার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গারহাট তালিমপুর-তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে অনেক কথা বলে, কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির তুলনা করে; কেউ কেউ বলে দুই দল। এখানে একটা কথা বলতে চাই, ২০০৮ সালের সেই নির্বাচনের বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০টা সিট। আওয়ামী লীগ মহাজোট করেছিল, বিএনপির ছিল ২০ দলীয় জোট; বিএনপির নেতৃত্বে পেল ৩০টা সিট আর বাকি আওয়ামী লীগ তাহলে এই দুই দল এক পর্যায়ের হয় কীভাবে?’
তিনি বলেন, ‘যারা ওই দুই বড় দল বলবেন তারা ভুল করেন। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মানুষের সংগঠন এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই দল গড়ে উঠেছে। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নতি হয়। আর বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত; যে দলগুলো আছে এরা কারা?
‘অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছে, উচ্চ আদালতের রায় আছে। সেই সময় ক্ষমতা দখলকারী অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল তৈরি করেছিল সেই দল হচ্ছে বিএনপি। এরা মানুষের কল্যাণও চায় না, মঙ্গল চায় না। মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ায়, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। কাজেই এদের সাথে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এ দেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, স্বাধীনতার সুফল আজকে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাচ্ছে। ইনশাল্লাহ পৌঁছাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি সরকার আমলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলা, ৫০০ একসঙ্গে বোমা হামলা, ৬৩ জেলায় বোমা হামলা, দুর্নীতিতে পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন, ওরা মানুষকে কিছু দেয়নি; মানুষের অর্থ সব লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে গেছে। এমন একটা রাজনৈতিক দল তারা তাদের নিজেদের গঠনতন্ত্র মানে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির গঠনতন্ত্রে আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতা হতে পারে না, আর বিএনপি আজকে কি একটা নেতাও পায় না যে অন্তত সাজাপ্রাপ্ত আসামি না। খালেদা জিয়া ও তার ছেলে দুজনেই সাজাপ্রাপ্ত আসামি... তারা সেই দলের নেতা নিজেরা নিজেদের দলের গঠনতন্ত্র মানে না, নিয়ম মানে না, আইন মানে না তো সেই দলের সাথে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে না।’
উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের মাঝেই তো আমি ফিরে পাই আমার হারানো বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। আপনাদের এই স্নেহ ভালবাসাই আমার একমাত্র শক্তি। আপনাদের জন্য সবসময় দোয়া করি, আপনারাও দোয়া করবেন। এ বাংলাদেশকে যেন উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে যেন গড়ে তুলতে পারি।’
কোটালীপাড়ার জনসভা মাঠে পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখান থেকে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এর মধ্যে ৪৩টি নবনির্মিত উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শাজাহান খান, কাজী আকরাম উদ্দীন আহমদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহাবুব আলী খান, সাধারণ সম্পাদক জি এম শাহাবুদ্দিন আজম প্রমুখ।