সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার দুধের সুনাম শুধু খুলনা শহর জুড়ে নয়, দেশের বিখ্যাত কয়েকটি দুধ বিক্রির প্রতিষ্ঠানও সেখান থেকে দৈনিক কয়েক হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করে। আর এই সুযোগে প্রকৃত দুধ উৎপাদনের খামারিদের পাশাপাশি সেখানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর সৃষ্টি হয়েছে। যারা প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার ভেজাল দুধ উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
২০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তালা উপজেলার মহান্দী গ্রামে অভিযান চালিয়ে উজ্জল ঘোষ নামক এক ভেজাল দুধ ব্যবসায়ীকে আটক করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ সময়ে তার কাছ থেকে ৩৬ কেজি গ্লুকোজ, ১০ কেজি সয়াবিন ও ৪৭০ কেজি ভেজাল দুধ বাজেয়াপ্ত করা হয়।
অভিযানের সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান।
মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘সয়াবিন তেল ব্লেন্ডারে দিয়ে প্রথমে ক্রিম বানানো হয়। এর সঙ্গে পানি ও গ্লুকোজ মিশিয়ে ভেজাল দুধ তৈরি করা হয়। যা আটক হওয়া উজ্জল কুমার ঘোষ স্বীকার করেছেন। আর আমরা জব্দ করা ভেজাল দুধ পরীক্ষা করেও ওইসব উপাদান পেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘উজ্জ্বল দীর্ঘদিন এ সব অপদ্রব্য মিশিয়ে তরল দুধ বানিয়ে বিক্রি করে আসছেন। তিনি স্বীকার করেছেন ওই এলাকার আরও অনেক ব্যবসায়ী এই ধরনের কাজে জড়িত।’
মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘তালা উপজেলায় অভিযান চালিয়েও ভেজাল দুধ তৈরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে সেখানের ঘোষপাড়াগুলোতে এমন ভেজাল কারবার চলছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও জনপ্রতিনিধিদের এটি বন্ধে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা অভিযান করছি, শাস্তির আওতায় নিয়ে আসছি। অথচ পরবর্তীতে দেখা যাচ্ছে তারা আবারও একই কাজে লিপ্ত হচ্ছে। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
এর আগে গত বছরের শেষের দিকে দুগ্ধ খামার সমবায় সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রশান্ত ঘোষকে বিপুল পরিমাণ ভেজাল দুধ ও বিভিন্ন উপকরণসহ আটক করা হয়। পরে তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
তালা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ -২২ অর্থবছরে উপজেলাতে মোট দুধ উৎপাদিত হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬০ টন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, ‘পুরো তালা উপজেলা দুধ উৎপাদনে বেশ সমৃদ্ধ। তবে বিশেষ করে মাঝিয়াড়া, মহান্দী ও জেয়ালা গ্রামে সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদিত হয়। চাহিদার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি উৎপাদন হওয়ায় এসব দুধ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। এছাড়া প্রাণ, ডেইরি মিল্ক, আড়ং ও মিল্ক ভিটা খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে দুগ্ধ জাতীয় পণ্য প্রস্তুত করে। তাদের দুধ সংগ্রহের জন্য উপজেলাতে ৫টি পয়েন্ট আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য প্রকৃত খামারিদের দুর্নাম হচ্ছে। আমরা কয়েকদিন আগেও জেয়ালা গ্রামের এক দুধ ব্যবসায়ীকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। এবার মহান্দী গ্রামে অভিযান চালিয়ে উজ্জল ঘোষ নামের এক ব্যবসায়ীকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন অভিযান চালানো হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের দমন না করা গেলে, এখানের দুগ্ধজাত শিল্পের সুনাম অক্ষুন্ন থাকবে না।’
ওই গ্রামের একাধিক খামারি জানান, ‘এখানে অনেকে আছেন যাদের গোয়ালে গরু আছে মাত্র দুটি বা পাঁচটি। তারাও দৈনিক এক হাজার লিটার দুধ বিক্রি করতে নিয়ে যায়। এটা আমরা প্রশাসনকে জানালে মাঝে মধ্যে অভিযান হয়। আর প্রায় সময়ে প্রশাসন এখানে আসে না। তাই অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল দুধ তৈরি করে প্রকৃত খামারিদের দুর্নাম করান।’