বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেহেরপুরে বাড়ছে ডায়রিয়া, ঠান্ডাজনিত রোগী

  • প্রতিনিধি, মেহেরপুর   
  • ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০৯:৪৮

গাংনী উপজেলা ও মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গাংনী ৫০ শয‍্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু ওয়ার্ডে গত ৭ দিনে ২৪০ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত প্রায় দেড় শতাধিক, বাকিরা ঠান্ডাজনিত রোগে। বর্তমানে ২০ শয‍্যা শিশু বেডের বিপরীতে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন ৫৬ জন।

দিনে প্রচণ্ড গরম আবার ভোর থেকে সকাল ৯টা পযর্ন্ত ঘন কুয়াশা- এমন আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে মেহেরপুরে বাড়ছে ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, যার অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক।

সরকারি হাসপাতালে প্রতিদিনই জ্বর-সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় অনেকের জায়গা হয়েছে হাসপাতালের বেডসহ প্রবেশ পথে, মেঝেতে এমনকি সিঁড়ির ওপরে।

গত কয়েক দিনে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালসহ, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ‍্য কমপ্লেক্স ছাড়াও জেলার বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে পাঁচ শতাধিকের বেশি শিশু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দিনে গরম ও মধ‍্য রাতে ঠান্ডা পড়ায় শিশুরা কখনও ঘেমে যাচ্ছে, আবার কখনও ঠান্ডার কবলে পড়ছে, এতে শিশুরা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ‍্য কমপ্লেক্সগুলোতে এক সপ্তাহ ব্যবধানে দ্বিগুনের বেশি বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা।

অভিভাবকেরা বলছেন, ডায়রিয়া ও ঠান্ডায় আক্রান্ত শিশুদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়ার পর, হাসপাতালে ভর্তি করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। আবার হাসপাতালে এসে জায়গা পাওয়াটাও কঠিন যাচ্ছে। তাই মেঝেতে কিংবা সিঁড়ির ওপরে যেখানে জায়গা হচ্ছে সেখানে থেকেই ভালো চিকিৎসা পাবার আসায় ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গাংনী উপজেলা ও মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গাংনী ৫০ শয‍্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু ওয়ার্ডে গত ৭ দিনে ২৪০ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত প্রায় দেড় শতাধিক, বাকিরা ঠান্ডাজনিত রোগে। বর্তমানে ২০ শয‍্যা শিশু বেডের বিপরীতে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন ৫৬ জন।

শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ৫০ বেডের বিপরীতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭৮ জন শিশু, গত এক সপ্তাহে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৫৬ জন, আর এক মাসে ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত কারণে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৪৯৮ জন।

আর হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে গত ৭ দিনে প্রাপ্তবয়স্ক ৫০ ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ১৭ জন। তবে গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়াই আক্রান্ত হয়ে কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

শুক্রবার বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, শয্যার থেকে বেশি রোগী থাকায় বেশ কয়েকজনকে রাখা হয়েছে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের প্রবেশ পথের মেঝেতে, কেউবা সিঁড়ির ওপরে, বাথরুমের প্রবেশ পথে।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা নিতে আসা এ উপজেলার নওদা পাড়া গ্রামের তাহেরা খাতুন বলেন, ‘আমার মেয়ে ভালই ছিল হঠাৎ করে একবার পাতলা পায়খানা হলো। তার আধা ঘন্টা পর থেকে আটবার পায়খানা হয়ে মেয়ে আমার নেতি (দুর্বল) হয়ে গেলে। তারপরে এ হাসপাতালে ভর্তি করেছি। প্রথম দিন মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিয়েছি। আজ দুপুরের পর বেড পেয়েছি।’

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ‍্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা ৬ মাস বয়সী শিশু রওফের মা আমেনা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলের ঠান্ডা লাগা এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গেল। গ্রামের ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করেছি, তবে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আমি তিনদিন আগে গাংনী হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছি। এখানকার ডাক্তাররা বলছে বাবুর নিউমোনিয়া হয়ে গেছে। দেখি আল্লাহর উপর ভরসা রেখে চিকিৎসা নিচ্ছি।’

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ডায়রিয়াজনিত কারণে ভর্তি সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের সোহাগি খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমি বুধবার ডাইরিয়ার কারণে এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছি। এখানে এসে দেখি কোনো জায়গা খালি নেই। তারপরও ভালো চিকিৎসা পাওয়ার আসায় আমি সিঁড়ির ওপরে এক পাশে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন একটু ভালোর দিকে।’

মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের সাহেব আলীর মা বলেন, ‘আমার ছেলে আজ দুদিন ধরে ডায়রিয়া হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। কিছুতেই পায়খানা কমছে না। খালির পানির মতো পায়খানা করে যাচ্ছে। একটা ছোট ঘর তার মধ‍্যে আমার মত আরও পাঁচজন অন‍্য বাচ্চা চিকিৎসা নিচ্ছে। কষ্ট হলেও ভালো চিকিৎসা সেবা পাওয়ার আসায় এখানে ভর্তি হয়েছি।’

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ‍্য কমপ্লেক্সের আর এম ও ডা. আব্দুল্লাহ আল মারুফ জানান, দিনে গরম রাতে ঠাণ্ডা পড়ছে। এমন আবহাওয়ার কারণে বাচ্চাদের গরম কাপড় পরালে অনেক সময় ঘেমে গিয়ে ঘাম শরীরেই শুকিয়ে যাচ্ছে। আবার রাতের বেলায় ফ‍্যান চালিয়ে রাখলে ভোরে ঠাণ্ডা পড়ছে। এতে শিশুরা বেশি ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ বাচ্চাদের অভিভাবক মায়েদের একটু বেশি সর্তক হতে হবে।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আর এমও ডা. মোখলেচুর রহমান জানান, বতর্মানে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ৫০টি আসনের বিপরীতে ৭৮ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী যারা বর্তমানে ভর্তি আছেন, তাদের সেবার কোনো কমতি হচ্ছে না। আমাদের বেডের তুলনায় বেশি রোগী ভর্তি আছে এটা ঠিক। তবে আমাদের মেডিসিনের কোনো কমতি নেই, পাশাপাশি হাসপাতালের ডাক্তার থেকে নার্স সকলেই সেবা প্রত‍্যাশীদের প্রতি আন্তরিক।

এ বিভাগের আরো খবর