আপাতদৃষ্টিতে ওরা রিকশাচালক। রিকশা নিয়ে রাজধানীর পথে ঘুরে বেড়ায়। নির্দিষ্ট শিকার বাছাই করে তাকে যাত্রী হিসেবে রিকশায় তুলে নেয়। এক পর্যায়ে ওরা দলবদ্ধভাবে যাত্রীর সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে ঝগড়া বাধায়। আর এই ফাঁকে যাত্রীর মালামাল নিয়ে চম্পট দেয়।
সংঘবদ্ধ এই অপরাধী চক্রের পরিচিতি ‘কাইজ্যা পার্টি’ হিসেবে। এমনই একটি চক্রের হোতা ও এক সদস্যকে আটক করেছে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ। প্রতারণা করে মালামাল হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে তাদেরকে আটক করা হয়। তারা হলেন- চক্রের প্রধান সাইদুর রহমান হাওলাদার ও তার সহযোগী মো. মোর্শেদ।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা থেকে আটকের পর তাদের কাছ থেকে লুট করা চার লক্ষাধিক টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম ও দুই লাখ টাকার প্রসাধন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।
ওসি জানান, ২০ ফেব্রুয়ারি মিরপুর ১০ নম্বরে মহিউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট দুটি যন্ত্র নিয়ে শেওড়াপাড়ায় যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। একপর্যায়ে রিকশা নিয়ে হাজির হন সাইদুর। রিকশায় উঠে কিছুদূর যাওয়ার পর সাইদুর রিকশা নষ্ট হয়েছে জানিয়ে যাত্রী মহিউদ্দিনকে কিছুদূর হেঁটে এগুতে বলেন।
মহিউদ্দিন হেঁটে কিছুটা সামনে এগুতেই ওঁৎ পেতে থাকা ২/৩ জন ইচ্ছাকৃতভাবে তার সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে দেন। এই সুযোগে মালামালসহ রিকশা নিয়ে পালিয়ে যান সাইদুর।
ভুক্তভোগী মহিউদ্দিন এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করলে বৃহস্পতিবার রাতে জড়িত দুইজনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কেরানীগঞ্জের শহীদনগর এলাকা থেকে লুটে নেয়া চার লক্ষাধিক টাকা মূল্যের চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং দুই লাখ টাকার প্রসাধন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার দুজন জানান, তাদের গ্রুপে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ৭ থেকে ৮ জন সদস্য আছে। তারা কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে এই কাজ করে। তাদের মধ্যে এক দল রিকশা চালায় এবং আরেক দল ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে থাকে। সুযোগ বুঝে রিকশা যাত্রীর সঙ্গে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঝগড়া বাধায়। আর রিকশাচালক মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়। সাইদুর এই দলের ‘মাদলিওয়ালা’, যে রিকশা চালায়। আরেক দল ‘পল্টিওয়ালা’, যে ঝগড়া বাধিয়ে রিকশায় থাকা মালামাল লুটের সুযোগ করে দেয়। আর ভুক্তভোগী যাত্রী যখন সংশ্লিষ্ট রিকশাটি খুঁজতে থাকেন তখন এই দল উল্টো রাস্তা দেখিয়ে দেয়।
ওসি আরও জানান, ‘মালামাল হাতিয়ে নেয়ার পর তার ৭০ শতাংশ সবাই সমানভাবে ভাগ করে নেয়। বাকিটার মধ্যে ২০ শতাংশ পায় ‘মাদলিওয়ালা’ আর ১০ শতাংশ পায় ‘হাঁটাওয়ালা’। চক্রটি দুই বছর ধরে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে এই প্রতারণা করে আসছে।