অনুষ্ঠানে না যাওয়ায় রাজশাহী কলেজ হোস্টেলে ঢুকে শিক্ষার্থীদের পেটানোর অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসে বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, রাতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। সন্ধ্যার পর রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসের ই-ব্লক ও বি-ব্লকে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের শিকারদের মধ্যে রয়েছেন দুজন গণমাধ্যমকর্মীও।
তারা হলেন- কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব ও শরীফুল ইসলাম। তারা ক্যাম্পাস সাংবাদিক সংগঠন রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির (আরসিআরইউ) সদস্য।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী শাহরুখ, রাফিসহ কয়েকজন এ হামলায় নেতৃত্ব দেন।
মারধরের শিকার নাজমুস সাকিব বলেন, ‘ছাত্রলীগের কর্মীরা বিভিন্ন সময় তাদের দলীয় প্রোগ্রামে জোর করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে যায়। আজও বিকেলে ছাত্রলীগের একটা প্রোগ্রামে যেতে বলা হয়। সেখান থেকে ছাত্রলীগ নেতা রাফিকে (প্রোগ্রাম কনভেনর) মেডিক্যালে যাওয়ার কথা বললে হোস্টেল ছেড়ে দিতে বলে। তাকে মানিয়ে আমি মেডিক্যাল যাই। সেখান থেকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে হোস্টেলে ফিরলে ছাত্রলীগের শাহরুখ, রাজু, রাফি, হাসানসহ ৮ থেকে ১০ জন মিলে আমার রুমে ঢুকে মারধর করতে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মোবাইল ফোনসহ বেশ কিছু দামি জিনিসপত্র কেড়ে নেয়। এক পর্যায়ে, সব শিক্ষার্থীকে ব্লকে আটকে রেখে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করতে থাকে, অনেককে মারধরও করে। পরে সকলকে ধাক্কা দিতে দিতে গণরুমে নিয়ে যায়। সেখানে শাসানো হয় যে, যদি কারও কাছে কিছু বলি তাহলে আরও ভয়ানক কিছু করবে। এক কথায় হোস্টেলে আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।’
আরেক ভুক্তভোগী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টায় বের হয়ে ব্যক্তিগত কাজে সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম। সন্ধ্যায় রুমে ঢুকে নিউজ লিখছিলাম। এমন সময় হঠাৎ রাশিক দত্তের কর্মী শাহরুখ রুমে ঢুকে পড়ে। কিছু না জিজ্ঞেস করেই অতর্কিত মারতে থাকে। সাংবাদিক পরিচয় দিলে আরও মারতে শুরু করে। তার সঙ্গে আরও ছেলেরা এসে আমাকে মেরে রুম থেকে বের করে দেয়। বকাবকি ও ধাক্কাধাক্কি করে অন্য ব্লকে নিয়ে যায়।’
এদিকে, মারধরের শিকার ছাত্রদের খোঁজ নিতে গিয়ে রাতে ছাত্রলীগের তোপের মুখে পড়েন অধ্যক্ষ। বুধবার রাত আনুমানিক ১২টার দিকে কলেজ প্রশাসন হল পরিদর্শনে গেলে এ ঘটনা ঘটে।
এক পর্যায়ে কলেজ অধ্যক্ষ, ছাত্রাবাসের সুপারসহ সাংবাদিকদেরও প্রকাশ্যে হুমকি দেয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। পরে রাত ১টার দিকে পরিবেশ শান্ত হয়। তবে ছাত্রাবাসজুড়ে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রাতে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, ‘এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে। কোনো রাজনৈতিক দলের নির্যাতন সহ্য করতে না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অন্যরকম সুনাম আছে। আমরা যে ছাত্রলীগ করেছি, এই ছাত্রলীগ কি সেই ছাত্রলীগ!’
তিনি আরও বলেন, ‘কলেজে ছাত্রলীগের যে সদস্যরা শিক্ষার্থী নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে। রাজশাহী কলেজের যে সুনাম আছে তা কতিপয় নেতার কারণে নষ্ট হতে পারে না।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দও ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান অধ্যক্ষ।
শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন সংগঠনের সদস্যরা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি রাশিক দত্ত মুঠোফনে বলেন, ‘কালকের ঘটনা আমি শুনেছি। এ ঘটনা নিয়ে আমাদের স্যারেরা বৃহস্পতিবার ডেকেছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে আজকে বসব।’
তিনি বলেন, ‘জোর করে অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে মিথ্যা কথা ছড়ানো হয়েছে। যারা অনুষ্ঠানে যাবে না তাদের সঙ্গে কোনো বাধ্যবাধকতা নাই। তারপরও যদি কেউ এমন ঘটনা করে থাকে আমরা ও কলেজ প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কোনো ছাত্রকে বাধ্যবাধকতা নাই বা আমরা করিও না।’
তিনি বলেন, ‘কেউ সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে থাকলে আমরা হোস্টেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
রাতে অধ্যক্ষকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের হুমকি দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি সেখানে কেউ কেউ রাতে গেছিলো। স্যারের সঙ্গে কেউ খারাপ আচরণ করলে সেটার বিষয়েও আমরা ব্যবস্থা নিব।’
আজকে স্যারের সঙ্গে বসে এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে বলে জানান রাশিক দত্ত।
রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, ‘মারধরের ঘটনা শুনে আমরা রাতেই সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছি। তারা সেখানে গিয়ে অধ্যক্ষ ও অন্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা নিজেরাই বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে।
‘এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থেকেই অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’