ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি থেকে সাইকেল চালিয়ে ঢাকায় এসে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শৈবাল ব্যানার্জি নামে এক শিক্ষক ও তার স্ত্রীসহ সাতজন।
প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সোমবার ঢাকায় পৌঁছে একুশে ফেব্রুয়ারির সকালে মঙ্গলবার শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এই আট বাঙালি।
শৈবাল ব্যানার্জি হুগলি জেলার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক। তার সঙ্গে এসেছেন স্ত্রী মহুয়া ব্যানার্জি, বন্ধু শ্রীকান্ত মন্ডল, প্রশান্ত সরকার, প্রণব কুমার মাইতি, রমজান আলী, রঞ্জন দাস ও সত্যব্রত ভাণ্ডারী।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হুগলির চন্দননগর থেকে বাইসাইকেলে রওনা করেন তারা। ছয় দিন ধরে সাইকেল চালিয়ে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান আটজন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় রাতযাপন করেন তারা। মঙ্গলবার সকালে হাতে ফুল, মাথায় পতাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান।
শৈবাল ব্যানার্জি বলেন, ‘আগেও আমি ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। তবে এবার আমার স্ত্রীসহ আটজন এসেছি। আমরা শুধু ভাষাকে ভালোবেসে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে এখানে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের কাছে অনেক বেশি গর্বের। একুশে ফেব্রুয়ারির কারণেই আমরা বাংলার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছি। এটা আমাদের পরম পাওয়া। এই দিনে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা না জানালে ভাষার সম্মান অপূর্ণ থেকে যেত বলে আমি মনে করি।’
শৈবাল ব্যানার্জি বলেন, ‘এই সম্মান জানানোর মাধ্যমে দুই বাংলার মেলবন্ধন ঘটেছে। দুই বাংলার মধ্যে পার্থক্য শুধু কাঁটাতার। এছাড়া আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। আমাদের ভাষা, চলাফেরা, ব্যবহার ও সংস্কৃতি সবই এক। ভাষাকে ঘিরেই দুই বাংলা মিলেমিশে একসঙ্গে এগিয়ে চলুক। এটাই আমাদের চাওয়া।’
তিনি বলেন, ‘কলকাতায় নতুন ছেলেমেয়েরা অনেকেই ঠিকভাবে বাংলা বলতে পারে না। বাবা-মায়েরা বাংলা শেখাতে চান না। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা। সেই ভাষাকে তারা অবহেলা করে। তারা রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে জানতে চায় না। আমরা চাই বাংলা পৃথিবীর এক নম্বর ভাষা হয়ে উঠুক। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ এগিয়ে যাক।’
ঢাকায় আসার কারণ সম্পর্কে শৈবাল ব্যানার্জি বলেন, ‘ওপার বাংলার মানুষও এ দিনটাতে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়। কিন্তু যেহেতু ১৯৫২ সালে ঢাকার রাজপথ রক্তাক্ত হয়েছিল। তাই এখানকার মতো আবহ ওখানে পাওয়া যায় না। সে কারণেই ঢাকায় শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি।’