মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে এসে কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেছেন, আধা ঘণ্টা বলাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে আসতে পারলেও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল থেকে শহীদ মিনারে আসতে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা সময় লেগেছে। শহীদ মিনারেও দলবাজি হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। তার নেতৃত্বেই দলের নেতা-কর্মীরা শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘সাড়ে সাতটার দিকে আমরা বলাকা ভবন থেকে আমাদের মিছিল শুরু করেছি। আটটার সময় থেকে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। সেখান থেকে এখানে আসতে আমাদের পৌনে পাঁচ ঘণ্টা লেগেছে।
‘অথচ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা মঞ্চ থেকে বারবার উচ্চারণ করা হয়েছে। তারা ফুল দিয়েও বেদি ত্যাগ করেনি। এখানে থেকে একজন বারবার ঘুরে ফিরে নাম লিখে বারবার ঘোষণা দিয়ে অযথা সময় নষ্ট করেছে। ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা ছিল এটি তাদের ব্যর্থতা।’
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আমাদের বিলম্বিত করার জন্য তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই ভাষা শহীদদের ফুল দিতে শহীদ মিনারে এসেও দলবাজি হয়েছে। এই দিনকে রাজনীতিকরণ করা সঠিক হয়নি। আমরা এটির প্রতিবাদ করছি।’
তবে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি সংগঠন থেকে যারা ফুল দিতে এসেছেন তারা ফুল দিয়ে চলে গেছেন। অতিরিক্ত সময় ধরে কেউ বেদিতে অবস্থান করেননি। আওয়ামী লীগের নেতারা যখন জগন্নাথ হলের সামনে তখন প্রথমবার ঘোষণা মঞ্চ থেকে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর সেখান থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত আসা পর্যন্ত আরও দশবার তাদের নাম ঘোষণা করে বলা হয়, ফুল দিতে শহীদ মিনারের দিকে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। যখন ফুল দেওয়া শেষ তখন বলা হয়, ফুল দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।
পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন ছিল মুক্তিযুদ্ধের বীজ। তাই ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এক। সেটি হলো, এই দেশ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হবে। এ দেশের জনগণ নিজের হাতে ভোট দিয়ে নিজেদের মতো করে সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। আর সেই দল জনগণের সেবা করবে। সে দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকবে না।
‘কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আজকে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছে তারা দেশের গণতন্ত্র হত্যা করেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তারা সব দলকে বাতিল করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। সে দলের নেতারা এখন বলছে, তারা নাকি দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করেনি। এটা হাস্যকর।’
তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গণতন্ত্র আজকে দেশে নেই, নেই মানবাধিকার। লুটপাট ও দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস প্রায়। সারা বাংলাদেশে মানুষ আওয়াজ তুলেছে, যারা গনতন্ত্র হত্যা করেছে, অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, যারা বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করেছে তারা এই দেশকে মেরামত করতে পারবে না।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতিতে মানুষের জীবন এখন বিপন্ন। এ থেকে জনগণ মুক্তি চায়। ভাষা দিবসে আমাদের দাবি, জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে অনতিবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। অবৈধ সংসদ বাতিল করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর কাছে দরখাস্ত করে বাকশালে যোগ দিয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে দাবি করেছেন সেটির বিষয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘সেই ব্যাপারে আমাদের জানা নেই। তবে আমরা ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে জানি। তিনি ইনিয়ে বিনিয়ে নানাভাবে বহু কথা এদেশে তিনি প্রচার করেন।’
এ সময় বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান ও আবদুস সালামসহ আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।