বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এক পরিবারে ৩ প্রতিবন্ধীর জীবন সংগ্রাম

  • আবদুল জলিল, খাগড়াছড়ি   
  • ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৮:৩৮

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার অশ্বিনী মহাজন পাড়ায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের পরিবারটির কর্তা চেন মোহন ও তার ছোট ছেলে বিরল এক রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন পঙ্গু। বড় ছেলে কারখানায় কাজ করতে গিয়ে একটি হাত হারিয়েছেন। ওদের জীবন কাটছে খেয়ে না খেয়ে।

এক পরিবারে তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিবন্ধিত্বের শিকার। জীর্ণ একটি ঘরে মাথা গুঁজে পড়ে থাকা মানুষগুলোর দিন কাটে খেয়ে না খেয়ে। নিজ চোখে না দেখলে ওদের জীবন সংগ্রাম কতটা কষ্টের।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বোয়ালখালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অশ্বিনী মহাজন পাড়ায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের একটি পরিবার এভাবে প্রতিবন্ধী জীবনের ভার বহন করে চলেছে।

অশ্বিনী মহাজন পাড়ার মৃত সর্পরাম ত্রিপুরার ছেলে চেন মোহন ত্রিপুরা প্রায় ১৫ বছর আগে এক বিরল রোগে আক্রান্ত হন। সুচিকিৎসার অভাবে তার এক পা অবশ হয়ে যায়। বর্তমানে তার বয়স ৬৫ বছর।

একই রোগে আক্রান্ত তার ছোট ছেলে কৃষ্ণ মোহন ত্রিপুরার। তিনি এখন ২২ বছর বয়সের তরুণ। সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় হাত পা প্যারালাইজড হয়ে যায়৷ পরিবারের একমাত্র সুস্থ ব্যক্তি ছিলেন চেন মোহন ত্রিপুরার বড় ছেলে জীবন ত্রিপুরা। কিন্তু এখানেও ভাগ্য মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ঢাকায় একটি কারখানায় কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় তিনি এক হাত হারান।

সরেজমিনে অশ্বিনী মহাজন পাড়ায় গিয়ে কথা হয় চেন মোহন ত্রিপুরার সঙ্গে। তিনি ঠিকমতো হাঁটতেও পারেন না। ছোট ছেলে কৃষ্ণ মোহনের শারীরিক অবস্থা আরও শোচনীয়। হাঁটা তো দূরের কথা, ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না তিনি।

চেন মোহন জানান, সরকারি সুযোগ-সুবিধা বলতে পরিবারের মধ্যে একমাত্র তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা পান। সেই ৭৫০ টাকা দিয়ে কোনোমতে চলছে তাদের জীবন। চেন মোহন ত্রিপুরাকেও প্রতিবন্ধী কার্ড দেয়া হয়েছে। তবে তিনি এখনও ভাতা পাওয়া শুরু করেননি।

চেন মোহন ত্রিপুরা বলেন, ‘আমার বড় ছেলের এক হাত নেই। প্রতিবন্ধী হয়েও সে ঢাকায় গিয়ে কাজ করে সামান্য কিছু টাকা তার স্ত্রী-সন্তানের জন্য পাঠায়। সেখান থেকে তার স্ত্রী কিছু টাকা দিলে তা দিয়ে কোনোরকম খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাই।

‘সংসারের খরচ বহন করতে পারি না বলে একই ঘরে থেকেও গত দুই বছর ধরে স্ত্রী আমার সাথে কথা বলে না।’

চেন মোহন ত্রিপুরার মেয়ে কবি বাসনা ত্রিপুরা বলেন, ‘আমার বাবা ও দুই ভাই প্রতিবন্ধী। অভাবের তাড়নায় বাবার সঙ্গে কথা বলে না মা। আমার নিজেরও আর্থিক অবস্থা ভালো না। তাই ইচ্ছা থাকলেও বাবা, মা ও ভাইদের সহযোগিতা করতে পারি না৷’

স্থানীয় বাসিন্দা আয়শ্রী ত্রিপুরা বলেন, ‘আমাদের গ্রামের সবচেয়ে অসচ্ছল পরিবার এটি। আমরা সবসময় সাহায্য-সহযোগিতা দেয়ার চেষ্টা করি। তাদের ঘরটিও জীর্ণ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন চাইলে তাদেরকে সরকারি অর্থায়নে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের সহযোগিতা করতে পারেন।’

বোয়ালখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা (কালাধন) বলেন, ‘একই পরিবারে তিনজন প্রতিবন্ধীকে শত ভাগ ভাতার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। আর ঘরের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।’

দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম বলেন, ‘একই পরিবারে তিনজন প্রতিবন্ধী থাকার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। উপজেলা প্রশাসন খোঁজ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াবে।’

এ বিভাগের আরো খবর