পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধ পথে অস্ত্র চোরাচালান করে ভুয়া লাইসেন্স তৈরির মাধ্যমে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রয় এবং স্বনামধন্য বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়া চক্রের মূলহোতা পলাশসহ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-২ এর একটি যৌথ দল রোববার রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন পলাশ শেখ, মনোয়ার হোসেন, রশিদুল ইসলাম, নাজীম মোল্লা, মারুফ হোসেন ও নাইমুল ইসলাম।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ওয়ান শুটার গান, ৭টি একনলা বন্দুক, ২টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ৮ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ওয়ান শুটারের গুলি ২ রাউন্ড, একনলা বন্দুকের গুলি ৬৭ রাউন্ড, ০ দশমিক ২২ বোর রাইফেলের গুলি ৪০ রাউন্ড, ১১টি জাল লাইসেন্স, ১৯টি বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার নামীয় সিলসহ অন্যান্য সামগ্রী।
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, চক্রটি অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে রিভলবার, পিস্তল ও একনলা বন্দুকসহ বিভিন্ন ধরণের আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান করত। পরবর্তীতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অভিনব কৌশলে ভুয়া ও জাল লাইসেন্স তৈরির মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র বিক্রির জন্য বেসরকারি বিভিন্ন স্বনামধন্য নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা সংক্রান্ত চাকরি দিতে আকৃষ্ট করে আগ্রহীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিত। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ৪ থেকে ৫ জন।
র্যাব জানায়, চাকরি দেয়ার জন্য জনপ্রতি ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। অবৈধ অস্ত্র ও ভুয়া লাইসেন্স পাওয়া ব্যক্তিরা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি গার্ড হিসাবে চাকরি করত। এ ছাড়াও চক্রটি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে চড়া দামে জাল লাইসেন্স তৈরি করে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করত।
র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, পলাশ ২০০৪ সালে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে। জীবিকার তাগিদে ২০১৩ সালে ঢাকায় আসে এবং একটি স্বনামধন্য সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি শুরু করে। সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিরত অবস্থায় ২০১৫ সালে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ভুয়া লাইসেন্স করা একটি অবৈধ বন্দুক কিনে একটি বেসরকারি ব্যাংকে অধিক বেতনে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি শুরু করে। পরবর্তীতে সে নিজেই অবৈধ পথে অস্ত্র চোরাচালান ও বিক্রি শুরু করে এবং ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল তৈরি করে।
তিনি আরও জানান, পলাশের নেতৃত্বে চক্রটি সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে অস্ত্র সংগ্রহ এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তার নামের সিল তৈরি করে জাল লাইসেন্স তৈরির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করতে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বনামধন্য বেসরকারি সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুবাধে ওই প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব অবস্থান তৈরি হওয়ায় বিভিন্ন চাকরি প্রার্থীদের অধিক বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখাত। এ যাবত ২০ থেকে ২৫ জনের কাছে অর্থের বিনিময়ে ভুয়া লাইসেন্স করা অস্ত্র বিক্রি করেছে।
র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, এ চক্রের কাছ থেকে ভুয়া লাইসেন্স ও অস্ত্র যারা কিনেছে তাদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া প্রতিষ্ঠানকে এ সব নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয়া জরুরি।