বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রথম শহীদ মিনার নির্মাতাদের একজন নওগাঁর ভাষাসংগ্রামী ডা. মঞ্জুর

  • প্রতিনিধি, নওগাঁ    
  • ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৩:৩৬

জেলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি ডিএম আব্দুল বারী জানান, ১৯৫২ সালে অগ্নিঝরা দিনগুলোতে সামনের সারিতে যারা ছিলেন তাদের অন্যতম ভাষাসংগ্রামী ডা. মঞ্জুর হোসেন। ভাষা সংগ্রামে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা দিতেন।

২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পূর্ণ হলো। ১৯৫২ সালের পর নিয়মিত এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারি-বেসকারি বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক দল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে দিনটি পালন করে। তবে ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস এখনও অনেকেই জানেন না। এমনই একজন ভাষাসংগ্রামী ডা. মঞ্জুর হোসেন। প্রথম শহীদ মিনার যাদের হাতে তৈরি, তিনি তাদের একজন।

নওগাঁ সদর উপজেলার সুলতানপুর এলাকার বাসিন্দা ভাষাসংগ্রামী ডা. মঞ্জুর হোসেন। বাবা মোবারক আলী ও মা নুরুন নাহারের আট সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ভাষাসংগ্রামী মঞ্জুরের জন্ম ১৯২৮ সালে ১৫ জুন। ১৯৬৮ সালে ৪ ডিসেম্বর ৪০ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।

শিক্ষা ও কর্মজীবন

১৯৪৩ সালে নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৪৫ সালে কলকাতা থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৫৯ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন ভাষাসংগ্রামী মঞ্জুর। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেও চাকরি না করে আজীবন সাধারণ মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। এমবিবিএস পাশ করে নিজ জন্মস্থানে পেশাজীবন শুরু করেন। তার চার ছেলে ও দুই মেয়ে।

ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা

ভাষাসংগ্রামী ডা. মঞ্জুর তখন ঢাকা মেডিক্যালের শেষ বর্ষের ছাত্র। ১৯৪৯ সালে সরকারি স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দিবসে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে গোলাম মাওলার কক্ষে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে সংগ্রাম কমিটিতে মতবিরোধ দেখা দেয়। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘১৪৪ ধারা ভাঙবই ভাঙব।’ মেডিক্যাল ব্যারাকে এক স্বতস্ফূর্ত সমাবেশে প্রতিবাদী বক্তব্য দিয়েছিলেন ভাষাসংগ্রামী ডা. মঞ্জুর। রাতে ফজলুল হক হলের পুকুর পাড়ে ১১ জন ছাত্রনেতা ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিতে গোপন বৈঠকে বসেন। সেখানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন তিনি।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হলে শিক্ষার্থীরা চার জন করে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে সত্যাগ্রহে অংশ নেয়। স্লোগান দিয়ে বের হলে পুলিশ ছাত্রদের গ্রেপ্তার করে ট্রাকে তোলে। এক পর্যায়ে প্রায় ১০ হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রী গ্রেপ্তার, লাঠিচার্জ ও কাঁদানো গ্যাসের মধ্যে দিয়ে মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণে আসেন। বিকেল ৩টায় পরিষদের অধিবেশনের আগেই ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ বিকেল ৪টার দিকে গুলি চালায়। এতে অনেকেই শহীদ হন। সেই দলের নেতৃত্বে ছিলেন হাবিবুর রহমান শেলী, ডা. মঞ্জুর হোসেন ও আকমল হোসেন।

২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে কয়েকজন ছাত্রনেতা শহীদের স্মৃতির উদ্দেশে রাতে নিজেরা ইট, সিমেন্ট ও বালু দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। এই প্রথম শহীদ মিনারের অন্যতম কারিগর ছিলেন ভাষাসংগ্রামী ডা. মঞ্জুর হোসেন। পরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলে। ভাষা আন্দোলনে সাহসী ও সংগ্রামী ভূমিকার জন্য সহযোদ্ধারা তাকে ‘বিপ্লব দা’ উপাধি দিয়েছিলেন। ভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়ায় কারাভোগ করতে হয় ভাষাসংগ্রামী মঞ্জুরকে। আন্দোলন ছাড়াও এ দেশের বহু গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সৈনিক ছিলেন তিনি। পাকিস্তান সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ায় ১৭ বার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

করেছিলেন সাংবাদিকতাও

চিকিৎসার পাশাপাশি ভাষাসংগ্রামী মঞ্জুর সাংবাদিকতার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। বাবার উদ্যোগ ও সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘সাপ্তহিক দেশ বাণীর’ সম্পাদনার দায়িত্ব নেন ১৯৬০ সালে।

ভাষাসংগ্রামী মঞ্জুর হোসেনের তৃতীয় ছেলে সাবেক কাউন্সিলর হাসান ইমাম তমাল বলেন, ‘যে ১১ জনের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভাঙা হয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম আমার বাবা। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সংগ্রাম শুরু হয়ে ১৯৭১ এ দেশ স্বাধীনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। ভাষা সংগ্রামে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার ২০০২ সালে বাবাকে একুশে পদক (মরণোত্তর) দেয়া হয়। সে সময় ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের অনেকেই এখনও স্বীকৃতি পাননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি এলে শহীদ মিনারে আমরা হুড়োহুড়ি করে ফুল দেই। এখনও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নাই। আগামী প্রজন্ম জানবে না শহীদ মিনার আসলে কী। সরকারের উচিত পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসে ভাষা সৈনিকদের আত্মজীবনী তুলে ধরা এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের মর্যাদা দেয়া।’

স্বামীর স্মৃতিচারণ করে স্ত্রী জাকেরা জামানী বলেন, ‘একদিন বিকেলে বাজার করার জন্য ব্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ি ফিরেননি। পরে লোকজন এসে জানায় তাকে পুলিশ ধরে গেছে। সন্ধ্যার পর ছেলেরা বাজার করে নিয়ে আসার পর রাতের রান্না হয়। তিনি নিজের জন্য কিছুই করেননি। সমস্যার মধ্যে তার জীবন কেটেছে। অনেকবার জেল খেটেছেন।’

জেলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি ডিএম আব্দুল বারী জানান, ১৯৫২ সালে অগ্নিঝরা দিনগুলোতে সামনের সারিতে যারা ছিলেন তাদের অন্যতম ভাষাসংগ্রামী ডা. মঞ্জুর হোসেন। ভাষা সংগ্রামে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা দিতেন।

এ বিভাগের আরো খবর