বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছেলেকে দেখতে এসে গ্রেপ্তার ফাঁসির আসামি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৫:৪৪

র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আত্মগোপনে থাকাকালীন ব্যক্তিগত পরিচয় গোপন রেখে ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। মুগদার উত্তর মান্ডা এলাকায় তার ছেলে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে। সেখানে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে আসলে তাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।’

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবদুল ওয়াহেদ মণ্ডল ছদ্মনামে তাবলিগ জামাতে যুক্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় গেছেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

বাহিনীটির ভাষ্য, রাজধানীর মুগদার মান্ডা এলাকায় ছেলের বাসা থেকে বৃহস্পতিবার রাতে র‍্যাব-৩ তাকে গ্রেপ্তার করে।

ব্রিফিংয়ে কী জানাল র‌্যাব

রাজধানীর কারওয়ানবাজার শুক্রবার দুপুরে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওয়াহেদ মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি জানান, গ্রেপ্তার ওয়াহেদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী আবদুল ওয়াহেদ দলটির গাইবান্ধা সদরের সদস্য সচিব ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, তার বাবা আবদুল জব্বারও একই মামলার মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। জব্বার গাইবান্ধা সদর এলাকার শান্তি কমিটি ও সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীর প্রধান সংগঠক ছিলেন। বাবার সঙ্গে যোগসাজশে আবদুল ওয়াহেদ ও তার ভাই দুজনই শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে এলাকায় লুটপাট ও বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম চালান।

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১ জুন ওয়াহেদ তার বাবা, ভাই ও সঙ্গীসহ পাকিস্তান আর্মিকে নিয়ে গাইবান্ধা সদর থানার বিষ্ণুপুর গ্রামে হিন্দু সম্পদায়ের ওপর গণহামলা চালান। ওই এলাকার প্রায় অর্ধশত হিন্দু বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, অপহরণসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়ে পরিবারগুলোকে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য করেন।’

র‍্যাব জানায়, এ ঘটনায় ২০০৯ সালে গাইবান্ধার বিচারিক আদালতে আবদুল ওয়াহেদসহ পাঁচজনকে আসামি করে মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলা করেন আবদুর রউফ। পরে ২০১৪ সালে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে স্থানান্তর করা হয়।

বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হলে আব্দুল ওয়াহেদসহ অন্য আসামিরা ২০১৬ সাল পর্যন্ত জামিনে থাকেন। ২০১৬ সালে জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এবং পরবর্তী জামিনের আবেদন নাকচ হয়ে গেলে আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।

র‍্যাব আরও জানায়, পরবর্তী তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা প্রতিটি অভিযোগ প্রমাণ হলে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। রায় হওয়ার পর পলাতক অবস্থায় দুই আসামি আবদুল জব্বার ও রঞ্জু মিয়ার মৃত্যু হয়। আরও দুই আসামির মধ্যে জাছিজার রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। মোন্তাজ আলী পলাতক রয়েছেন।

র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক জানান, তদন্তে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য অনুযায়ী গাইবান্ধা সদর থানায় আসামিদের নৃশংসতায় প্রাণ হারান প্রায় আটজন বীর মুক্তিযোদ্ধা; গৃহহীন হয় অনেক হিন্দু পরিবার।

তিনি আরও বলেন, মামলাটির বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালে ২০১৬ সালে আবদুল ওয়াহেদ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলার শুনানিতে হাজিরা না দেয়ায় আবদুল ওয়াহেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এর পরপরই নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় এসে সাভারে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকেন।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘…তিনি একটি তাবলিগ দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায় তাবলিগ করে আত্মগোপনে থাকেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি নিয়মিত তাবলিগ দলের সঙ্গে স্থান পরিবর্তন করতেন। এ সময় তিনি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অন্যের রেজিস্ট্রেশনকৃত সিম দিয়ে মোবাইল ব্যবহার করতেন।

‘আত্মগোপনে থাকাকালীন ব্যক্তিগত পরিচয় গোপন রেখে ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। মুগদার উত্তর মান্ডা এলাকায় তার ছেলে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে। সেখানে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে আসলে তাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।’

আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার র‌্যাব-২-এর

আবদুল ওয়াহেদের নামে হওয়া মামলার আরেক আসামি জাছিজার রহমান খোকাকে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-২।

বাহিনীটি জানায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে জাছিজারসহ রাজাকার বাহিনীর অন্য সদস্যরা গাইবান্ধা সদরে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট-অগ্নিসংযোগ, ভয়-ভীতি এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে ধর্মান্তর ও দেশান্তরে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কাজ করেন। তারা একাত্তরের ১৮ অক্টোবর পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে গাইবান্ধার সদর এলাকার সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনা গ্রামসহ আটটি গ্রামের ১৪ নিরীহ মানুষকে হত্যার পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক, ইসলাম উদ্দিন ও নবীর হোসেনসহ সাতজন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে খুন করেন। এই রাজাকাররা ২১ জনকে হত্যা করেন।

২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা মামলায় জাছিজারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ট্রাইব্যুনাল দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর জাছিজারকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়।

র‍্যাব-২ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করে।

এ বিভাগের আরো খবর