ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পালন করতে এসে হামলার শিকার হয়েছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা।
সংগঠনটির ঢাবি শাখার সভাপতি আসিফ মাহমুদের ভাষ্য, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা করেছেন। এ হামলায় তাদের ২০ জনেরও বেশি নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাস চত্বরে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক সংবাদকর্মী বলেন, ‘ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা টিএসসির গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতে গেলে সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের গতিরোধ করেন। এ সময় দুই পক্ষ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকেন। একটু পরে অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা সেখান থেকে ফিরে যাওয়া শুরু করলে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের মারধর শুরু করেন।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি শাখার সভাপতি আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘টিএসসিতে আমরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করব, এটা আগে থেকেই ঘোষণা দেয়া ছিল। আমরা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহীদ মিনারের দিক থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্য প্রদক্ষিণ করে টিএসসির গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতে যাই।
‘এর আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবীর শয়ন এবং সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীরা টিএসসির গেট ব্লক করে রাখে।’
তিনি বলেন, ‘এ সময় আমাদের সঙ্গে তাদের মুখোমুখি অবস্থানের সৃষ্টি হয়। একটু পরেই তারা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এতে আমাদের ২০ জনেরও অধিক আহত হয়েছেন। আর ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ আরও কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। বর্তমানে তারা বিভিন্ন মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন আছেন।’
ঘটনার সময় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘বিপিএলের নবম আসরে কুমিল্লার শিরোপা জয় যখন আমরা উদযাপন করছিলাম টিএসসিতে, ঠিক তখনই ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃত্বে কিছু বহিরাগত আমাদের পথ আটকে দেয়। ক্রিকেট-ফ্রিকেট এই দেশে চলবে না বললে কুমিল্লা জেলার কিছু আবেগপ্রবণ মানুষ তাদের আবেগ ও ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বিচ্ছিন্নভাবে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যারা সাধারণ শিক্ষার্থী ক্রীড়াকে দারুণভাবে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করি, তাদের অনূভুতিতে আঘাত দেওয়ার চেষ্টা করে অছাত্র, বহিরাগত ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমাদের পথ আটকে দেয়। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেটপ্রেমীরা এটার তীব্র নিন্দা জানাই।’
এদিকে ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বরত এক সংবাদকর্মীকে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফরিদের বিরুদ্ধে।
এই বিষয়ে সংবাদকর্মী আমজাদ হোসেন হৃদয় বলেন, ‘আমি দায়িত্ব পালন করতে গেলে ডাস চত্বরে জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের জয়েন্ট সেক্রেটারি ফরিদসহ কয়েকজন আমার দিকে তেড়ে আসে। ভিডিও করছি কেন জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে এবং মোবাইল দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। সাংবাদিক পরিচয় দিলেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে।
‘পরে প্রক্টরিয়াল টিম ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এসে আমার পরিচয় দিলে তারপর তারা চলে যায়। এরপর তারা সাংবাদিক সমিতির বাহিরের কোনো সাংবাদিক ভিডিও করছে কি না, খোঁজ করতে থাকে।’
এই বিষয়ে আসাদুজ্জামান ফরিদ বলেন, ‘আমজাদ ভাই সাংবাদিক সমিতির সদস্য জানতে পেরে আমি উনাকে আর কিছু বলি নাই। তখন সবাইকে নিয়ে আমি চলে আসি।’
কেউ ভিডিও করলে তেড়ে যাওয়ার অধিকার রাখেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তা রাখি না, ঠিক। আর আমি একা যাইনি। আমার সাথে আট-দশজন পোলাপান ছিল।
‘এখন আমাকে চিনতে পেরেছে বলে আমাকে প্রেশার দেয়া হচ্ছে। উনার পরিচয় পাওয়ার পর আমিই উনাকে সেভ করেছিলাম।’