ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা অন্তরা ও তার সহযোগী তাবসসুম ইসলামকে সংগঠন থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বৃহস্পতিবার রাতেই তারা হল ছেড়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম নিউজবাংলাকে হল ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হাইকোর্টের নির্দেশ পাওয়ার ৫ ঘণ্টা পর অভিযুক্ত অন্তরা ও তাবাসুমকে ক্যাম্পাসের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে সন্ধ্যা ৬টার দিকে হল প্রশাসনকে নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
হলের প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম বলেন, ‘আমাকে প্রশাসন মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে। আমি আমার হল বডি নিয়ে আলোচনা করে অভিযুক্তদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছি। হাইকোর্ট ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা দিতে বলেছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিকেলে আমি ও ইবি থানার ওসি কথা বলে নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছি।’
ক্যাম্পাসে আসলে ভুক্তভোগী কোথায় থাকবে জানতে চাইলে প্রক্টর জানান, বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুস সালাম বলেন, ‘আমার সঙ্গে এখনো যোগাযোগ হয়নি। তারাও কোনো যোগাযোগ করেনি। প্রক্টর ও ইবি থানাকে ছাত্রীকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করছি। আইনে যা হবে, তাই করা হবে।’
এদিকে এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলো। বিবৃতির মাধ্যমে র্যাগিংয়ের প্রতিবাদ জানিয়েছে শাখা ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রমৈত্রী, ছাত্রদল ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। এ ছাড়াও বাংলাদেশে মহিলা পরিষদ নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
বিষয়টি তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল কর্তৃপক্ষ ও শাখা ছাত্রলীগ আলাদা তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
এ ঘটনায় আইনজীবী গাজী মো. মহসীনের জনস্বার্থে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার নির্দেশনাসহ কয়েকটি আদেশ দেন। আদালত জেলা প্রশাসককে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলেছেন
তিন সদস্যের কমিটিতে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা, জেলা জজ মনোনীত বিচার বিভাগীয় একজন কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক থাকবেন। কমিটি গঠনের সাতদিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
তদন্ত চলাকালীন অভিযুক্ত দুজনকে হল ও ক্লাসের বাইরে রাখতে বলা হয়েছে। এ বিষয়টি বৃহস্পতিবার থেকেই কার্যকর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আদেশে নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ভুক্তভোগী চাইলে মামলা করতে পারবে এবং মামলা নিতে ইবি থানা বাধ্য থাকবে।
একই সঙ্গে এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের করা কমিটির রিপোর্টও দশদিনের মধ্যে দাখিল করতে বলেছেন আদালত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে গত রোববার রাতে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে নবীন ওই শিক্ষার্থীকে।
ওই ছাত্রী অভিযোগে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তার অনুসারীরা নির্যাতন চালিয়েছে। একপর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল, ময়লা জিনিসপত্র জিহ্বা দিয়ে চাটানোসহ অমানবিক নির্যাতন করেন। এমনকি এ কথা কাউকে বললে মেরে ফেলার ও শিয়াল কুকুর দিয়ে খাওয়ানোর হুমকি দেন ওই ছাত্রলীগ নেত্রী। এ ছাড়াও ভিডিও ভাইরাল করারও হুমকি দেয়া হয়।’
অভিযুক্ত ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। এসব উল্লেখ করে তিনিও প্রশাসনের কাছে পাল্টা অভিযোগপত্র দিয়েছেন। নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপবাদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।