বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মরুর মাংসাশী উদ্ভিদ দিনাজপুরে

  •    
  • ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৭:৩৪

উদ্ভিদটির শরীরে এক ধরনের আঁঠালো লালা রয়েছে। বর্ণিল এই উদ্ভিদ ও ফুল ছোট ছোট পোকা-মাকড়কে আকৃষ্ট করে। সেগুলো এসে উদ্ভিদটির লালার ওপর বসলেই আটকে যায়। পরবর্তীতে উদ্ভিদটি সেই পোকার শরীরের পুষ্টি দিয়ে নিজের বংশবিস্তার করে।

মরুভূমির উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত ‘সানডিউ’ বা সূর্যশিশির। এই উদ্ভিদের বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটি মাংসাশী অর্থাৎ পতঙ্গভূক। আর মরুর এই উদ্ভিদ জন্মেছে বাংলাদেশে। ২০০৫ সাল থেকে দিনাজপুর সরকারি কলেজ মাঠে এই উদ্ভিদ জন্ম নিচ্ছে।

উদ্ভিদটি জন্মানোর জায়গায় অবাধে মানুষ ও পশুর বিচরণের ফলে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার উদ্ভিদটির সংখ্যা কমে গেছে। পতঙ্গখেকো উদ্ভিদটি নিয়ে গবেষণার জন্য জন্মানোর জায়গাটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

দিনাজপুর সরকারি কলেজের পুকুরের পাশের মাঠে ২০০৫ সালের প্রথম দিকে এই পতঙ্গখেকো উদ্ভিদ আবিষ্কার করেন কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। এরপর থেকে একই জায়গায় প্রতি বছর জন্মাতে থাকে সূর্যশিশির।

উদ্ভিদটির শরীরে এক ধরনের লালা রয়েছে। বর্ণিল উদ্ভিদ ও ফুল ছোট ছোট পোকা-মাড়ককে আকৃষ্ট করে। পোকা-মাকড় উদ্ভিদটির লালার ওপর বসলেই আটকে যায়। আর ছুটতে পারে না। ওই অবস্থায়ই পোকা মারা যায়। পরবর্তীতে উদ্ভিদটি সেই পোকার শরীরের পুষ্টি দিয়ে নিজের বংশ বিস্তার করে।

তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পতঙ্গখেকো উদ্ভিদটি জন্মানোর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। কারণ হিসেবে উদ্ভিদটির জন্মানোর জায়গায় অবাধে মানুষ ও পশুর চলাচলকে দায়ী করেছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

তারা বলছেন, জায়গাটি সংরক্ষণ করে উদ্ভিদটির বংশবিস্তার অব্যাহত রাখলে এটি নিয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি এই উদ্ভিদ পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করবে।

দিনাজপুর সরকারি কলেজ মাঠে জন্মেছে সূর্যশিশির। ছবি: নিউজবাংলা

সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ডালিম রায় বলেন, ‘স্যারের সঙ্গে এই পতঙ্গখেকো উদ্ভিদটি দেখতে আমরা স্যারের সঙ্গে মাঠের ওই এলাকা ঘুরছি। এই উদ্ভিদটি অনেকগুলো জন্মায়। তবে এ বছর অনেক কম জন্ম নিয়েছে। ফলে আমাদের খুঁজে বের করতে হচ্ছে।’

শিক্ষার্থী নওশিন ফারিহা বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও আমাদের কলেজের ক্যাম্পাসে পতঙ্গখেকো উদ্ভিদ সূর্যশিশির দেখা গেছে। উদ্ভিদটি ছোট ছোট পোকা-মাকড় খায়। সেখান থেকে পুষ্টি নিয়ে নিজের বংশ বিস্তার করে। এটি বিরল প্রজাতির একটি উদ্ভিদ। এটি ইউটিউবসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখা যায়। তবে উদ্ভিদটি আজ নিজ চোখে দেখার সুযোগ হয়েছে।’

উদ্ভিদটি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন মনে করেন কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী উদ্ভিদবিদ মোসাদ্দেক হোসেন। তিনি বলেন, ‘উদ্ভিদটি আমাদের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের জগতে কৌতূহলের বিষয়। এটি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি উদ্ভিদটি নিয়ে উত্তরবঙ্গে পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে।

‘পাশাপাশি এই অঞ্চল হিমালয়ের পাদদেশে হওয়ায় মরুভূমির উদ্ভিদ জন্মাচ্ছে। উত্তরবঙ্গে চলমান মরুকরণ প্রক্রিয়ারও এটি একটি উদাহরণ বলা যায়। উত্তরবঙ্গে আবহাওয়া ও পরিবেশ কিভাবে পরিবর্তন হচ্ছে, আমাদের কৃষি ও জনস্বাস্থ্যে তা কী বিরূপ প্রভাব ফেলছে সেসব বিষয় জানার জন্যও এই উদ্ভিদ নিয়ে প্রয়োজন রয়েছে।’

উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘পতঙ্গখেকো উদ্ভিদটি এক সময় আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে বিপুল পরিমাণে জন্ম নিত। আমি প্রতি বছর এই উদ্ভিদটি কিভাবে জন্মায়, কী পরিমাণ জন্মায় তা নিয়ে কাজ করছি। পাঠদানের অংশ হিসেবে আমরা প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের এই মাঠে নিয়ে আসি।

‘২০০৫ সাল থেকে ক্যাম্পাসে উদ্ভিদটি জন্ম নিচ্ছে। তবে বর্তমানে এটি জন্মানোর সংখ্যা অনেক কম। যে স্থানটিতে এই উদ্ভিদ জন্মায় সেখানে সাধারণ মানুষ ও পশুর অবাধ বিচরণ রয়েছে। এর ফলে সূর্যশিশিরের বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’

এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘উদ্ভিদটি বিজ্ঞানের ভাষায় ডোসেরা বারমানি নামে পরিচিত। উদ্ভিদটি জন্মানোর জায়গা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ২/৩ বছর আগে বাংলাদেশ হার্বোরিয়াম থেকে কয়েকজন বিজ্ঞানী এখানে এসেছিলেন। তারা এখানকার মাটিসহ উদ্ভিদটি নিয়ে যান। তারা কিছুদিন এ বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে তথ্য নেন। পরে আর তারা আগ্রহ দেখাননি।

‘এ ধরনের উদ্ভিদ দেখতে বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ বিদেশে যান। আমরা এখানে এই উদ্ভিদ সংরক্ষণ করতে পারলে তা দেখতে বাইরের দেশ থেকে অনেক পর্যটক আসবেন।’

এ বিভাগের আরো খবর