মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত যশোর রোডের ভারতীয় অংশের ৩০৬টি শতাব্দীপ্রাচীন গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
১৫০০ বৃক্ষরোপণের শর্তে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে বাংলাদেশের যশোর পর্যন্ত বিস্তৃত এই ঐতিহাসিক মহাসড়কের ওই গাছগুলো কাটার অনুমতি দেয়া হয় বলে জাানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
বারাসত থেকে বনগাঁর মধ্যে পাঁচটি রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ে ওভারব্রিজ তৈরির জন্য কাটা হবে এসব গাছ। আর নতুন গাছ লাগাবে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।
২০১৮ সালে এই গাছগুলো কাটায় স্থগিতাদেশ দিয়েছিল ভারতের আদালত। বুধবার সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নতুন আদেশ দেয় আদালত।
গাছ কাটা নিয়ে আইনি প্রতিবন্ধিকতায় দশকের পর দশক আটকে আছে যশোর রোড সম্প্রসারণের কাজ। উত্তর চব্বিশ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ কলকাতা ও বাকি দেশের অন্য এলাকার সঙ্গে সংযোগ রক্ষায় এই সড়কের ওপর নির্ভর করে।
বারাসত থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত যশোর রোড সম্প্রসারণের জন্য ৪০৩৬টি গাছ কাটার পরিকল্পনা করেছিল রাজ্য পূর্ত দপ্তর। সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে হাইকোর্টের কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি বা এপিডিআর।
তখন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চ গাছ কাটায় স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। পরে প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ উড়ালপুল বানানোর জন্য ৩৫৬টি গাছ কাটার নির্দেশ দেয়।
তবে শর্ত হিসাবে আদালত জানায়, একটি গাছ কাটার আগে ৫টি গাছ লাগাতে হবে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় এপিডিআর। হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
সম্প্রতি পুরো দেশে ১১৮টি প্রকল্পের আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় খরচ বেড়ে যাচ্ছে বলে জানায় কেন্দ্রীয় সরকার। তার একটি যশোর রোড সম্প্রসারণ। কেন্দ্রের আবেদনের ভিত্তি থেকে এই প্রকল্পগুলোর ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে আদালত।
তবে আদালতের পক্ষে জানানো হয়েছে, গাছ কাটার বদলে তার কাছাকাছি একই প্রজাতির গাছ লাগানো হচ্ছে কি না সেদিকে নজর রাখবে আদালত।
ঐতিহাসিক এই যশোর রোডের শুরু বাংলাদেশের যশোর জেলা থেকে। এটি পৌঁছেছে বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত বেনাপোল-পেট্রাপোল পেরিয়ে কলকাতায়।
বিবিসি জানিয়েছে, এই মহাসড়কটিতে ঐতিহাসিকভাবে ভারতের ব্রিটিশ শাসন আমলে যশোর শহরে একটি বিমানঘাঁটি ছিল। ফলে সেই সময় এই বিমানঘাঁটির সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি করার জন্য যশোর রোডের আধুনিকভাবে নির্মাণ করা হয়। সেসময় অনেক গাছ লাগানো হয় রাস্তার দুপাশে। বর্তমানে যশোর রোড বলতে দমদম থেকে বনগাঁর পেট্রোপোল সীমান্ত পর্যন্ত মহাসড়ককে বোঝায়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই যশোর রোড দিয়েই লাখ-লাখ শরণার্থী ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। শরণার্থীদের সেই ঢল নিয়ে বিখ্যাত মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড নামে একটি কবিতা লেখেন।