বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১৯ বছরেও অটুট বন্ধনে ১৪ দল

  •    
  • ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১০:২৭

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ১৪ দলীয় জোট ১৯ বছর পাড়ি দিচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়কালে শরিক কোনো কোনো দলে জোট ইস্যুতে অন্তর্বিবাদ এমনকি দল ভাঙার মতো ঘটনা ঘটেছে। সময়ে সময়ে শরিকদের মধ্যে পারস্পরিক টানাপোড়েনও দেখা গেছে। তারপরও বর্তমান সময়ে জোটে পারস্পরিক বোঝাপড়াটা সবচেয়ে বেশি বলে মন্তব্য করেছেন নেতারা।

মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র এবং অসাম্প্রদায়িক আদর্শের ভিত্তিতে ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। বিশেষত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অটুট থেকে সেই জোট আজও টিকে আছে। শুধু তাই নয়, বর্তমান সময়ে এসে জোটের বন্ধন আরও শক্তিশালী হয়েছে। পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

নিউজবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করলে জোটের শরিক দলের নেতারা প্রায় অভিন্ন সুরে এমন কথা বলেছেন।

১৪ দলীয় জোট ১৯ বছর পাড়ি দিচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়কালে শরিক কোনো কোনো দলে জোট ইস্যুতে অন্তর্বিবাদ দল ভাঙার মতো ঘটনা ঘটেছে। সময়ে সময়ে শরিকদের মধ্যে পারস্পরিক টানাপোড়েনও দেখা গেছে। যেমন জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির ক্ষেত্রে বিষয়টি অম্ল-মধুর।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু)-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ হিল কাইয়ুম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে এখন সর্বোচ্চ সম্পর্ক বিরাজমান। অটুট বন্ধনে আবদ্ধ শরিকরা। এমনকি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের যোগাযোগ এখন অনেক ভালো।’

একই সুরে কথা বলেন আরেক শরিক গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদৎ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে শরিক দলগুলোর মধ্যে ভালো যোগাযোগ এবং সুসম্পর্ক বিরাজমান।’

ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য কামরুল আহসান বলেন, আদর্শিক জায়গা থেকে শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক সবসময়ই ভালো। তবে জোটের মূল দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগটা কখনও একদম স্বাভাবিক আবার কখনও তাতে ব্যত্যয় ঘটে।’

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই বছরই ২৩ দফা ঘোষণা দিয়ে ১৪ দলীয় জোটের যাত্রা শুরু হয়।

প্রথমে আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও ১১ দল মিলে জোট গঠিত হয়। কিন্তু জোট গঠনের পর পরই ১১ দল ভেঙে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)সহ কয়েকটি দল বেরিয়ে যায়। রয়ে যায় ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণফোরামসহ কয়েকটি দল। তারপরও জোটটি ১৪ দল নামেই পরিচিত।

২০০৭ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম জোট ত্যাগ করে। পরের বছর জাতীয় নির্বাচনের আগে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি) ও নজিবুলবশর মাইজভাণ্ডারীর নেতৃত্বাধীন তরিকত ফেডারেশন জোটে যোগ দেয়।

এছাড়া গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ-রেজাউর), গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণআজাদী লীগ ও ন্যাপ (মোজাফফর) ১৪ দলের শরিক।

২০১৬ সালের ৯ মার্চ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ থেকে বেরিয়ে শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন একটি অংশ বাংলাদেশ জাসদ নামে আরেকটি দল গঠন করে। তাদের রেজিস্ট্রেশন না দেয়ার অভিযোগে ২০২২ সালের ২৮ মার্চ জোট ত্যাগ করে জাসদের খণ্ডিত এ দলটি।

বিএনপির ৭ সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলে সেসব শুন্য আসনে উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওয়ার্কাস পার্টি এবং জাসদের সঙ্গে সম্পর্কের ভিন্ন মেরুকরণ শুরু হয় জোটের মূল দল আওয়ামী লীগের। জাসদ বগুড়া-৪ এবং ওয়ার্কার্স পার্টি ঠাকুরগাঁও-৩ আসন দাবি করে বসে।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড বৈঠক করে তাদের সেই দাবি মেনে নেয়। বগুড়ায় জাসদের প্রার্থী বিজয়ী হলেও ঠাকুরগাঁওয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে যান ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ইয়াসিন আলী।

দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি আওয়ামী লীগের ওপর মনঃক্ষুণ্ন হয়। তাদের বক্তব্য, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জোট প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেনি। তারা বরং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গোপাল চন্দ্র রায়ের পক্ষে কাজ করেছে। আর সেজন্য ইয়াসিন আলী হেরে গেছেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিউজবাংলাকে জানায়, উপনির্বাচন ইস্যুতে দলে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল তা এখন আর নেই। কেননা বিদ্রোহী প্রার্থী গোপাল চন্দ্র রায় পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আর বর্তমানে তিনি উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি। তার পেছনে আওয়ামী লীগ নয়, ‘ইসকন’ ইস্যু কাজ করেছে বলে তারা জানতে পেরেছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নৌকা প্রতীকেই সব নেতাকর্মীকে মাঠে নামানো কঠিন হয়, সেখানে ওয়ার্কার্স পার্টির কাস্তে প্রতীকে তাদের ভোটের প্রচারে নামানোটা ছিলো অসম্ভব। যদিও এ নিয়ে কেউই নাম প্রকাশে বক্তব্য দিতে চাননি।

তবে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা আসন চেয়েছিল, আমরা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু ওয়ার্কার্স পার্টি প্রার্থীকে বিজয়ী করতে পারেনি।’

তবে এসব ছাপিয়ে ১৪ দলে এখন ইস্পাত-কঠিন ঐক্য বিরাজ করছে বলে নিউজবাংলার কাছে দাবি করেছেন জোটের মুখপাত্র এবং সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, ‘জোট এখন সম্পূর্ণ সক্রিয়। ইস্যুভিত্তিক আলোচনা হচ্ছে, নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বেড়েছে। অতীতের চেয়ে ১৪ দল এখন আরও শক্তিশালী হয়ে রাজপথে আছে।’

এ বিভাগের আরো খবর