দিনাজপুর শহরের ঈদগাহ বস্তির ৬৬ বছর বয়সী আফরোজা সরকারের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পবিত্র হজ পালন করার। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি হজ পালনের জন্য টাকা জমা করার কথা ছিল তার। এরই মধ্যে নিজের নামে করা পাসপোর্টটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় নবায়ন করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। পাসপোর্ট নবায়ন করার জন্য হাজির হলেন দিনাজপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। কিন্তু সেখানে গিয়ে আকাশ থেকে পড়ার মত অবস্থা।
কারণ পাসপোর্টের তথ্যানুযায়ী তিনি এখন বর্তমানে সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থান করছেন। আগেই তার পাসপোর্ট নবায়ন হয়ে গিয়েছে। তার স্বাক্ষর, ঠিকানাসহ সব ধরনের কাগজপত্র জালিয়াতি করে তার নামের পাসপোর্টটি নবায়ন করে অজ্ঞাত এক নারী সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থান করছেন।
পাসপোর্ট নবায়ন করতে গেলে গত রোববার সকালে জাল পাসপোর্ট ব্যবহার করে অজ্ঞাত ব্যক্তির জেদ্দায় অবস্থানের কথা জানতে পারেন তিনি। এ ঘটনায় সোমবার দিনাজপুর কোতয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছেন আফরোজা সরকারের ছেলে আসফাক হোসেন সরকার।
আফরোজা সরকার বলেন, ‘অনেক দিনের ইচ্ছা হজে যাওয়ার। মাঝে তো আমার স্বামী মারা গেল। তারপর আমারও চোখের সমস্যা ধরা পড়ল। চোখের চিকিৎসা করতে করোনার আগে আগে চেন্নাইতে গেছিলাম। এখন ছেলে বলল হজের জন্য নিবন্ধন করতে। পাসপোর্ট চেক করে দেখি মেয়াদ শেষ। ইমারজেন্সি পাসপোর্ট করার জন্য আমার ছেলে ব্যাংকে টাকা জমা দিছে।
‘এখন পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখি আমার নাম ছবি ব্যবহার অন্য কে জানি সৌদি আরবের জেদ্দায় আছে। এখন তো আমি হজে যেতে পারব কি না আল্লাহই ভালো জানেন।’
আফরোজা সরকারের ছেলে আসফাক হোসেন সরকার বলেন, ‘এবার আমার মায়ের হজের জন্য নিবন্ধন করেছি। তারপর দেখি আমার মায়ের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই পাসপোর্ট নবায়ন করতে আমি দিনাজপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গেলে জানতে পারি আমার মায়ের পাসপোর্ট নবায়ন করে জেদ্দায় অবস্থান করছে। কিন্তু আমার মা তো তখন আমার সাথেই পাসপোর্ট অফিসে ছিল।
‘আর আগের পাসপোর্টও আমার কাছে। তাহলে কীভাবে আরেকজন ব্যক্তি আমার মায়ের পাসপোর্ট ব্যবহার করে জেদ্দায় থাকতে পারে। কীভাবেই বা আমার মায়ের ছবি স্বাক্ষর ছাড়াই পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারে সেটা বুঝতেছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগের ওই পাসপোর্টটা ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি ইস্যু হয়েছিল যার মেয়াদ ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি শেষ হয়ে যায়। পাসপোর্ট নাম্বার ছিল ইঘ০২০৯৪৩৮। আর বর্তমান পাসপোর্টের নাম্বার হলো ঊঔ০৪১৮৮৪২। এই পাসপোর্ট নবায়ন করা হয়েছে ২০২১ সালের ২২ জুলাই যার মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের ২১ জুলাইতে। এখন তো আমাদেরকে ঢাকা পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে বলতেছেন এখানে যারা আছেন। কিন্তু আমরা তো দিনাজপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করেছি, তাহলে ঢাকায় যাব কেন? তারা কিভাবে পাসপোর্ট পেল, এখানে অবশ্যই এই পাসপোর্ট অফিসের অবহেলা আছে।’
এ বিষয়ে দিনাজপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আজিজুল হক বলেন, ‘উনাদের একাধিক পাসপোর্ট ছিল যার কোনো একটা দিয়ে কেউ পাসপোর্ট নবায়ন করেছে। আগের তো এমআরপি পাসপোর্ট ছিল যেটা পুরাতন পাসপোর্ট জমা দিলে ওই তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট নবায়ন করা যেত। এটা তেমন কিছু না। আমাদের এখানে বলার কিছুই নেই। তারা ঢাকা অফিসে যোগাযোগ করছে। এটা নিয়ে হেড অফিসের সাথে কথা বলতে হবে।’
একাধিক পাসপোর্টের বিষয়ে আফরোজা সরকারের ছেলে আসফাক হোসেন সরকার বলেন, ‘আমার মায়ের একাধিক কোনো পাসপোর্ট নেই। ২০১৭ সালেই শুধু একটাই পাসপোর্ট করা হয়েছিল যা দিয়ে আমার মায়ের চোখের চিকিৎসা করাতে ভারতে গিয়েছিলেন। পুরাতন পাসপোর্টও আমার কাছে। প্রধানমন্ত্রী দেশকে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন, সেখানে এ ধরনের জালিয়াতি মানা যায় না। আমি চাই এটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হোক।’