ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটেছে তা দেশের আইনি ইতিহাসে কালো দাগ সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।
আদালতের নির্দেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিন আইনজীবী হাইকোর্টে হাজির হলে মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করে।
সকালে এ বিষয়ে শুনানি শুরু হলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির হাইকোর্টকে বলেন, ‘মাই লর্ড, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিষয়টির পিসফুল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। আজ থেকে সব কোর্ট চলছে। আমাদের আরও কিছু কাজ আছে। সবকিছুর সমাধান হবে আমাদের ১ মাস সময় দিন।’
তখন হাইকোর্ট বলে, ‘কিছুই (ডেভেলপমেন্ট) হয়নি। হাইকোর্টে এটার তারিখের আগে ওখানে একটু নাড়াচাড়া করেন। আমরা বুঝি। দিন যাচ্ছে আর টাইম নষ্ট করছেন। এটার (কনসিকুয়েন্স ফেস) পরিণতি ভোগ করতে হবে। আপনারা (রুলের) জবাব দিলে দেন, না দিলে না দেন। আমরা আমাদের মতো আগাবো।
‘একটা কোর্টকে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অচল করে রেখেছেন। সমস্ত কিছু আমরা দেখছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বার (আইনজীবী সমিতি) বাংলাদেশের লিগ্যাল ইতিহাসে কালো দাগ সৃষ্টি করেছে, আইনজীবীদের কলঙ্কিত করেছে।’
এ সময় হাইকোর্ট বলে, ‘আইনজীবী সমিতির প্রেসিডেন্ট হোক আর সদস্য হোক, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না। বার কাউন্সিল আছে। তবে বার কাউন্সিল কিছু না করলে আমরা এখান থেকেই করবো। প্রতিদিন আমরা খবরের কাগজে চোখ রাখি যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারে কি হচ্ছে।
‘আপনারা কোর্ট বর্জন করছেন করেন, কিন্তু বিচার প্রার্থীরা কোর্টে গেলে তাদের ডিস্টার্ব করা হচ্ছে থ্রেট দেয়া হচ্ছে। আপনারা একতরফা (এক্সপার্টি) গেলে আমরা (এক্সট্রিম) এ যাবো। কে বারের সভাপতি, কে বিজ্ঞ আইনজীবী তা আমরা দেখবো না। এরা বাংলাদেশে প্রাকটিস (আইন পেশা পরিচালনা) করার যোগ্য কি না সেটাও আমরা দেখবো।’
একপর্যায়ে হাইকোর্ট তিন আইনজীবীকে তাদের ব্যখ্যা দিতে সময় দিয়ে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করে।
আদালতে আইনজীবীদের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল ও সাঈদ আহমেদ রাজা।এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারককে গালিগালাজের আটটি ফেসবুক ও পাঁচটি ইউটিউব ভিডিও অনলাইন প্লাট ফর্ম থেকে সরানো হয়েছে বলে আদালতকে জানান বিটিআরসির আইনজীবী আশরাফুল হাদী।
গত ২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক ও আদালতের কর্মচারীদের গালিগালাজ এবং অশালীন আচরণের অভিযোগে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ অন্য আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর একটি চিঠি পাঠান বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুক।
এরপর বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল। পরে প্রধান বিচারপতি বিষয়টি শুনানির জন্য বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
এরপর হাইকোর্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিচারক ও আদালতের কর্মচারীদের প্রতি ‘অশালীন আচরণের’ অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সম্পাদকসহ তিন আইনজীবীকে তলব করেন। সেই সঙ্গে এদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
এই ঘটনার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার আইনজীবীরা এজলাস চলাকালীন জেলা জজের নামে অশ্লীলে ও কুরুচিপূর্ণ শ্লোগান দেয়। এ ঘটনায় ফের ২১ আইনজীবীকে তলব করে হাইকোর্ট।