বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

২ টাকা কেজির টমেটো গলার কাঁটা কৃষকের

  •    
  • ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৬:৪৪

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জেলার কৃষকদের কৃষক বিজনেস স্কুল এর মাধ্যমে সবজির মার্কেটিং এর বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আমরা হাতে-কলমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি যাতে আগামীতে কখন, কিভাবে চাষ করলে টমেটোর ভালো উৎপাদনের পাশাপাশি সঠিক মূল্য পাওয়া যায় সে বিষয়ে কৃষকরা ভালোভাবে জানতে পারে।

উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে পুষ্টিগুণসম্পন্ন সবজি টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এমন ফলনে জেলার টমেটো চাষিদের খুশি হওয়ার কথা থাকলেও এই টমেটোই এখন কৃষকদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলার পাইকারি বাজারে টমেটো বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন টাকা কেজি দরে। এমন চিত্র জেলার চিতলমারী, কচুয়া ও মোল্লাহাটসহ সর্বত্র। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে মাত্র দুই থেকে তিন টাকা দরে টমেটো বিক্রি হওয়ায় জেলার টমেটো চাষিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ।

এমন অবস্থায় ক্ষেত থেকে টমেটো তোলার শ্রমিক খরচই ওঠাতে পারছেন না কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। ফলে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে প্রায় ৫০০ টন টমেটো। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি ও বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কমেছে টমেটোর।

বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট জেলায় এ বছর ১৮৫০ হেক্টর জমিতে টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪০ হাজার ৭০০ টন। যেখানে বাগেরহাট জেলায় এ বছর ১৯৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ৪২ হাজার ৯০০ টন টমেটো। এরমধ্যে বেশি টমেটো উৎপাদন হয়েছে জেলার চিতলমারী, কচুয়া ও মোল্লাহাট উপজেলায়।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, মৌসুমের প্রথমদিকে আগাম জাতের টমেটো চাষ করে ভালো মূল্য পেয়েছে কৃষকরা।

কৃষকদের অভিযোগ, প্রায় মাসখানেক আগেও যে টমেটোর কেজি ছিল ৪০ থেকে ৩০ টাকা সেই টমেটো পাইকারি বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন টাকা কেজি দরে। এমন অবস্থায় জেলার চিতলমারী, কচুয়া ও মোল্লাহাট উপজেলার টমেটো চাষিরা ক্ষেত থেকে টমেটো তোলার শ্রমিক খরচই ওঠাতে পারছেন না। যার ফলে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে মণকে মণ টমেটো। আর ন্যায্যমূল্য না মেলায় রাগ ও ক্ষোভে অনেক কৃষক তাদের টমেটো ফেলে দিচ্ছেন নদী ও খালে।

চিতলমারী উপজেলার বাখরগঞ্জ বাজারের টমেটো ব্যবসায়ী মো. আলাউদ্দিন মৃধা বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে টমেটো চাষ ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আমি। এ বছর আমাদের চিতলমারীতে টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথমদিকে দামও ভালো পেয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা, তবে মৌসুমের শেষদিকে টমেটোর দাম একটু কমে যায়। কিন্তু এত কম দাম আমি আমার ব্যবসার জীবনে দেখি নাই। মাত্র ২ থেকে ৩ টাকা কেজি বিক্রি করে কীভাবে কৃষক ও ব্যবসায়ী বাঁচবে? কৃষক ও ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে হলে সরকারিভাবে টমেটো সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপন জরুরি।’

জেলায় টমেটো পাইকারি বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন টাকা কেজি দরে। ছবি: নিউজবাংলা

জেলার কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের কৃষক মিলন মণ্ডল বলেন, ‘আমরা মূলত ঘের পাড়ের আইলে টমেটোর চাষ করি। এ বছর বিভিন্ন এনজিওসহ লোকজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে প্রায় ৫ লাখ টাকা খাটিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। এখনও আমার জমিতে প্রচুর টমেটো রয়েছে। হঠাৎ করে প্রায় ২০ থেকে ২৫ টাকার টমেটোর দাম দুই থেকে তিন ও সর্বোচ্চ চার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এমন অবস্থায় ক্ষেত থেকে টমেটো তুলতে পারছি না, কারণ শ্রমিকের মজুরি মূল্যও উঠছে না আমাদের। বাধ্য হয়েই ক্ষেতেই টমেটো রেখে দিচ্ছি। সময়ের সঙ্গে তা পচতে শুরু করেছে।’

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বাগেরহাট জেলায় সবচেয়ে বেশি টমেটো উৎপাদন হয় চিতলমারী, কচুয়া ও মোল্লাহাট উপজেলায়। অন্যান্য উপজেলায় সীমিত পরিসরে টমেটোর চাষ করা হয়। এ বছর জেলায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কয়েক হাজার টন বেশি উৎপাদন হয়েছে। জেলায় টমেটো চাষের জমি ও চাষি দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে চাহিদা চেয়ে বাজারে সরবরাহ বেশি হচ্ছে। এ কারণে হঠাৎ করে টমেটোর দাম কমে গেছে। যার ফলে কৃষকও কিছুটা বিপাকে পড়েছেন।

তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জেলার কৃষকদের কৃষক বিজনেস স্কুল এর মাধ্যমে সবজির মার্কেটিংয়ের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আমরা হাতে-কলমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি যাতে আগামীতে কখন, কীভাবে চাষ করলে টমেটোর ভালো উৎপাদনের পাশাপাশি সঠিক মূল্য পাওয়া যায় সে বিষয়ে কৃষকরা ভালোভাবে জানতে পারে। আশা করছি কৃষক বিজনেস স্কুল এর মাধ্যমে আগামীতে জেলার সবজি চাষিরা তাদের উৎপাদিত সবজির ন্যায্যমূল্য পেতে পারে।

এ বিভাগের আরো খবর