বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভয় দেখিয়ে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিলেন চকবাজারের ওসি

  •    
  • ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ২২:২৪

ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিভিল পোশাকে এসআই ওয়ালিউল্লাহ ও চার কনস্টেবল ২৬ জানুয়ারি রাত ১টার দিকে লালবাগের বাড়ি থেকে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। তারা আমাকে ওসির রুমে নিয়ে গেলে ওসি আব্দুল কাইউম বলেন- ৫০ লাখ টাকা না দিলে তোর নামে অস্ত্র মামলা দেয়া হবে। পরে আমার স্ত্রী এক বন্ধুর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা এনে ওসিকে দেন।’

পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ীকে বাসা থেকে ধরে এনে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ আদায় করেছেন চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইউম। তাকে দুদিন থানায় আটকে রেখে অস্ত্র মামলার ভয় দেখিয়ে তিনি এই টাকা আদায় করেছেন।

ভুক্তভোগী গাড়ি ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন ৫ ফেব্রুয়ারি আইজিপি কমপ্লেইন সেলে এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

তবে ওসি আব্দুল কাইউম অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

মোক্তার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২৬ জানুয়ারি রাত ১টার দিকে লালবাগের মাসুম কমিশনার গলির ৫২ নম্বর সাফ গার্ডেনের বাড়ি থেকে পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। সিভিল পোশাকে এসআই ওয়ালিউল্লাহ ও চার কনস্টেবল আমাকে ধরে ওসির রুমে নিয়ে যান।

‘ওসি আমাকে তুই-তুকারি শুরু করেন। বলেন- তুই তো ব্যবসা করিস, তোর অনেক টাকা। ৫০ লাখ টাকা না দিলে তোর নামে অস্ত্র মামলা দেয়া হবে।’

এক পর্যায়ে মোক্তার তার স্ত্রীর মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা এক বন্ধুর কাছ থেকে এনে ওসি কাইউমকে দেন। টাকার লেনদেন ওসির কক্ষেই হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোক্তারের স্ত্রী রোকেয়া বেগম।

তবে টাকা দেয়ার পরও চকবাজার থানা হাজত থেকে মুক্তি মেলেনি মোক্তার হোসনের। দুদিন আটকে রাখার পর ২৮ জানুয়ারি প্রতারণার মামলা দিয়ে থানা থেকে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি।

নেপথ্যে অবৈধ পলিথিন ব্যবসা

চকবাজার থানার ওসি কাইয়ুমের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবসায়ীয় সহায়তার অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেনকে আটক ও ঘুষ আদায়ের ঘটনা সেই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে জানা গেছে।

পুরান ঢাকায় অবৈধভাবে পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবসার পরিচালনা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। আইনগতভাবে এই ব্যবসা নিষিদ্ধ থাকলেও পুরো কারবারটি চকবাজার থানার ওসির ছত্রছায়া পাচ্ছে বলে অভিযোগ।

পলিথিন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করেন ওসি কাইউম। বিনিময়ে তিনি তাদের ব্যবসা পরিচালনায় সহায়তা দিয়ে থাকেন। এই ব্যবসায় জড়িতদের একজন ইমামগঞ্জ রহমানিয়া ট্রান্সপোর্টের মালিক আমিনুল ইসলাম মুরাদ।

ভুক্তভোগী গাড়ি ব্যবসায়ী মোক্তার জানান, পলিথিন ব্যবসায়ী মুরাদ এক সময় তার কাছ থেকে তিনটি ট্রাক ভাড়া নিতেন। সেসব ট্রাকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রী পাঠাতেন মুরাদ।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ একবার পলিথিনসহ তার ট্রাক জব্দ করে। গাড়ির মালিক হিসেবে মোক্তার টাকাপয়সা দিয়ে কয়েক মাস আগে ট্রাক ছাড়িয়ে আনেন। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ গত বছর তার আরেকটি ট্রাক জব্দ করে।

এরপর থেকে মুরাদকে আর ট্রাক ভাড়া দিচ্ছেন না মোক্তার। এনিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। ১৮ জানুয়ারি মুরাদের পলিথিনের ট্রাকে একটি জিপিআরএস ট্র্যাকার পাওয়া যায়। মুরাদ অভিযোগ করেন মোক্তার শ্রমিকদের দিয়ে ট্র্যাকার লাগিয়ে দিয়েছেন, যাতে পুলিশ সহজেই তার পলিথিন বহনকারী ট্রাক শনাক্ত করতে পারে।

মোক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার জন্য ফাঁদ পেতেছিল মুরাদ। আর এই কাজে সহায়তা করেছেন ওসি। গাড়িতে নিজেরা ট্র্যাকার বসিয়ে দোষ চাপিয়েছে আমার ওপর। আর মুরাদ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রতারণার মামলা দিয়েছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি আব্দুল কাইউম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মোক্তারের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তা আমার ঊর্ধ্বতনরা জানেন। এই মামলা থেকে বাঁচতে সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে।’

আইজিপি কমপ্লেইন সেলে জমা পড়া অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মো. জাফর হোসেনের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কমপ্লেইন সেল থেকে অভিযোগটি এখনও আমার কাছে আসেনি। অভিযোগের বিষয়টি আমাদের কাছে এলে তদন্ত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর