বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাবাকে খুন করে ডাকাতির নাটক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ২২:২২

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার ধর্মগঞ্জের মাওলাবাজার এলাকায় নিজ বাড়িতে থাকতেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম (৭২)। গত ৩১ জানুয়ারি রাতে নিজ বাড়িতে তাকে হত্যা করা হয়। পরে সেটিকে ডাকাতির ঘটনা বলে প্রচার করেন তার ছেলে মাসুদ।

সম্পত্তির লোভে নিজের বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন ছেলে। তারপর ডাকাতির নাটক সাজিয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে শেষ রক্ষা হয়নি। ধরা পড়েছে হত্যাকারী ছেলে। ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণগঞ্জে।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে রোববার এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।

পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের সহযোগী রুবেলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও নিহতের ছেলে এইচ এম মাসুদ (৪২) এখনও পলাতক রয়েছেন।

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার ধর্মগঞ্জের মাওলাবাজার এলাকায় নিজ বাড়িতে থাকতেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম (৭২)। গত ৩১ জানুয়ারি রাতে নিজ বাড়িতে তাকে হত্যা করা হয়। পরে সেটিকে ডাকাতির ঘটনা বলে প্রচার করেন তার ছেলে মাসুদ।

পিবিআইয়ের কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সম্পত্তির লোভে এক সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে আবদুল হালিমকে হত্যা করেন তার একমাত্র ছেলে এইচ এম মাসুদ। মৃত্যু নিশ্চিতে তার রক্তচাপ মাপা হয়। পরে হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নাটক সাজান ছেলে। মাসুদের সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পর প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে। ঘটনার পর থেকে মাসুদ পলাতক রয়েছেন।’

একমাত্র ছেলে হওয়ার পরও মাসুদ কেন তার বাবাকে খুন করতে যাবেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, ‘আবদুল হালিমের তিনটি বাড়ি ছাড়াও ভালো পরিমাণে স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। বাড়ি ভাড়া দিয়েই পরিবারটি চলছিল। তিনি দুই মেয়ের নামে অর্ধেক সম্পত্তি লিখে দিতে চেয়েছিলেন। এ ছাড়া সম্প্রতি ব্যাংক থেকে তোলা ৩০ লাখ টাকার মধ্যে ১০ লাখ মেয়েদের দিতে বলেছিলেন। কিন্তু মাসুদ এত সম্পত্তি বোনদের দিতে রাজি ছিলেন না। এ কারণে শেষ পর্যন্ত বাবাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। এ ছাড়া আরও কিছু বিষয় নিয়ে বাবার সঙ্গে তার তিক্ততা তৈরি হয়েছিল। একটু বেশি খরচ করলে মাসুদকে বকাবকি করতেন বাবা। পুরো সংসারের নিয়ন্ত্রণ ছিল আবদুল হালিমের হাতেই।’

মাসুদের স্ত্রীর বরাতে দিয়ে পিবিআিই কর্মকর্তারা জানান, ‘মাসুদও বাবার প্রতি খুব খিটখিটে হয়ে উঠেছিলেন। সামান্য একটুতেই অনেক বকাবকি করতেন। সহ্য ক্ষমতা কমে গিয়েছিল তার। ৪২ বছর বয়স্ক মাসুদের নেশার সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে তিনি ডায়াবেটিসে ভুগছেন।’

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার পর ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে আলামত ও ছেলের বক্তব্য নিয়ে সন্দেহ হয় তাদের। ডাকাতরা কীভাবে ওই বাসায় ঢুকল তা স্পষ্ট ছিল না পুলিশের কাছে। বাড়িতে চারটি সিসি ক্যামেরা থাকলেও মেশিন থেকে হার্ডড্রাইভ খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সে কারণে এ ঘটনাকে ‘রহস্যজনক’ মনে হয়।

তদন্তে পিবিআই কর্মকর্তারা জানতে পারেন, নিহতের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ইজিবাইকচালক মো. রুবেলের (২৭)। প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনার দিনও রুবেলের উপস্থিতি ভুক্তভোগীর বাড়ির আশপাশে পায় পিবিআই। কিন্তু ঘটনার দুদিন পর থেকে তার কোনো খোঁজ নেই। পরে সন্দেহভাজন হিসেবে শনিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার বোনের বাসা থেকে রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। বাবাকে হত্যা করতে সন্তানের খুনি ভাড়া করার বিষয়টিও উঠে আসে।

জিজ্ঞাসাবাদে আসামি রুবেলের দেয়া তথ্যের বরাতে পিবিআই জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার রাত ১০টায় মাসুদের ফোন পেয়ে তাদের বাড়িতে যান রুবেল। তার জন্য বাসার কলাপসিবল গেট ও ফ্ল্যাটের দরজা আগে থেকেই খোলা রাখে মাসুদ। রাত ১১টার দিকে আবদুল হালিম ঘুমিয়ে পড়লে মাসুদ তার বাবার হাত-পা চেপে ধরে এবং রুবেল তার গলা টিপে শ্বাসরোধের চেষ্টা করেন। ভুক্তভোগী চিৎকার দেয়ার চেষ্টা করলে রুবেল তার মুখের ওপর বালিশচাপা দেন। হত্যার পর মাসুদ তার কক্ষে থাকা রক্তচাপ মাপার যন্ত্রের সাহায্যে বাবার মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হন। এরপর অটোচালককে দিয়ে মাসুদ তার হাত-পা বাঁধান। তিনি চিৎকার করলে অন্য ফ্ল্যাটের লোকজন গিয়ে তার হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেন।

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী রুবেলকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডড্রাইভ বাইরে কোথাও ফেলে দিতে বলেন মাসুদ। পরে হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে ডাকাতির নাটক সাজান। তাই মাসুদকে পাটের দড়ি দিয়ে হাত, পা ও গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে রেখে যান রুবেল। চলে যাওয়ার সময় রুবেল হার্ডড্রাইভ ভুক্তভোগীর বাড়ির পেছনে ময়লার স্তূপে ফেলে রেখে যান। পুলিশ হত্যাকাণ্ডের আলামত সংগ্রহ করেছে।

এ বিভাগের আরো খবর