রাষ্ট্রপতি পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির নেতা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। সব ঠিকঠাক থাকলে তিনিই হবেন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।
জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে আওয়ামী লীগের। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী না দেয়ার কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছে। ফলে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার চুপ্পুর রাষ্ট্রপতি হতে দৃশ্যত কোনো বাধা নেই।
আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতি পদে ভোট হবে।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দলটির বিগত কমিটিতেও তিনি একই পদের পাশাপাশি প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু স্বাধীন বাংলা ছাত্রপরিষদের জেলা সভাপতি হিসেবে পাবনায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনকারী। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় ২০ আগস্ট সামরিক আইনের সাত ধারায় আটক হয়ে প্রায় তিন বছর কারারুদ্ধ ছিলেন তিনি।
কারাভোগের পর মুক্ত হলে চুপ্পু পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন চুপ্পু। তার বাবা শরফুদ্দিন আনছারী ও মা খায়রুন্নেসা। পাবনা শহরের পূর্বতন গান্ধি বালিকা বিদ্যালয়ে (বর্তমানে টাউন গার্লস স্কুল) তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি।
১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করার পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি এবং ১৯৭১ সালে (১৯৭২ সালে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়) বিএসসি পাস করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহিদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা চুপ্পু মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আইন পেশায় যোগ দেন। তিনি ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এ পেশায় ছিলেন। পরে ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন তিনি।
বিচারাঙ্গনে বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন তিনি।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়। সে সময় হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওসব ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠন করেন, যার প্রধান ছিলেন চুপ্পু।
২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের অন্যতম কাণ্ডারি হিসেবে পরিচিত এ নেতা পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। পেশাগত জীবনে প্রথম দিকে সাংবাদিকতাও করেছেন। তিনি পাবনা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির আজীবন সদস্য।
দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তিনি অভিযোগটি মিথ্যা ও অন্তঃসারশূন্য বলে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান, যা কানাডা কোর্টের সমর্থন পায়।
১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর পাবনা শহরের দিলালপুরের বাসিন্দা আলী আকতারের জ্যেষ্ঠ মেয়ে ড. রেবেকা সুলতানাকে বিয়ে করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
রেবেকা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়ে যুগ্ম সচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান, যিনি বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স প্রোগ্রামের অধ্যাপক। তিনি ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
চুপ্পু-রেবেকা দম্পতির একমাত্র সন্তান মো. আরশাদ আদনান (রনি) দেশ ও বিদেশে পড়াশোনা শেষে প্রাইম ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন।