গ্রামবাসীর চলাচলের সুবিধার জন্য তিন বছর আগে নদীর উপর নির্মাণ করা হয় নওগাঁও সেতু। চার কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি সুবিধার জন্য নির্মাণ করা হলেও বর্তমানে তা দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলেও হয়নি সংযোগ সড়ক। আর নকশার ত্রুটির কারণে সেতুটির উচ্চতা অনেক বেশি হওয়ায় কাজ সম্পন্ন হয়নি তিন বছরেও। বাধ্য হয়ে সেতুতে বাঁশের মই বসিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষসহ বৃদ্ধরা। আবার অনেকে সেতুর নিচে নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো বসিয়েও পারাপার হচ্ছেন।
ধামরাই উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর ঢাকা জেলা গ্রামীণ অবকাঠামো প্রকল্প-৩ এর আওতায় ২০১৯ সালে সুতিপাড়া ইউনিয়নের গাজীখালী নদীর উপর নওগাঁও সেতুটি নির্মাণকাজ শুরু হয়। এক বছর মেয়াদী প্রকল্পে ৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় চার কোটি ২১ লাখ ৫৪ হাজার ২৭১ টাকা।
গ্রামবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, সুতিপাড়া ইউনিয়নের নওগাঁও, বাথুলি, বালিথা, ভাটারখোলা, বারপাইকা, কেষ্টিসহ ১০-১২টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তাদের কথা চিন্তা করেই নওগাঁও সেতুটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। সড়ক থেকে অতিরিক্ত উঁচু সেতুতে ওঠার জন্য তারা বাঁশের মই বসিয়েছেন। কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে সেতুতে উঠতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে।
কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থী ও বয়স্করা পড়ছেন বেশি বিপাকে। চলাচলের সুবিধার জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হলেও বর্তমানে এটি গ্রামবাসীর গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। তাই দ্রুত সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বিলকেষ্টি গ্রামের ইউনুছ আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাস্তার জন্য আমাগো গ্রামের মানুষ অনেক কষ্টে আছে। আগে বর্ষকাল আইলে গাজীখালী নদীতে খেয়া দিয়া পারাপার হইতাম। নদীর পানি কমলে বাঁশের সাকো বানাইয়া পার হইতাম। অনেকদিন পর হইলেও তিন বছর আগে যহন নদীর উপর ব্রিজ বানাইলো। তহন অনেক আনন্দ হইছে।
‘কিন্তু ব্রিজের কাম এতদিনেও শ্যাষ না হওয়ায় আমরা পড়ছি বিপদে। অহন উঁচা ব্রিজের দুই মুখে বাঁশের মই লাগায় পার হইতে হয়। রাস্তা থাইকা প্রায় ২০-৩০ ফুট উঁচা ব্রিজ বানাইছে। এইডা যে কোন বুদ্ধি থাইকা বানাইছে তারাই জানে।’
নওগাঁও গ্রামের গার্মেন্টস শ্রমিক রাশেদা আক্তার বলেন, ‘আমাগো যাতায়াতের জন্য ব্রিজ বানাইলো। আজ কতদিন হইয়া গেল ব্রিজের কাম আর শেষ হইলো না। ব্রিজের দুই মুখে উঁচা মই দিয়া কষ্ট কইরা উঠতে হয় আর নামতে হয়। তারপর গার্মেন্টে যাইতে হয়। ছোট পোলাপান গুলা স্কুলে যাওয়ার সময় মই বাইতে পইরা গিয়া আঘাত পায়। বুইরা মাইনসেরও অনেক সমস্যা। এইডা অহন আমাগো গলার কাটা হইয়া গেছে। এমুন ব্রিজ আমাগো লাগবো না। আগে খেয়া পার হইতাম সেইডাই ভালো আছিলো। এই ব্রিজ নিয়া যাকগা।’
সুতিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রমিজুর রহমান রোমা বলেন, ‘ব্রিজটার জন্য এলাকার মানুষের অনেক কষ্ট। ব্রিজটা এত উঁচু কইরা না বানাইলেও পারত। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণেই এমনটা হয়েছে। এই নদীতেতো আর এতবড় ট্রলার চলে না যে ব্রিজ এত উঁচা লাগবে। তবে আমি উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয়টা আলোচনা করেছি। ইতোমধ্যে ব্রিজের সংযোগ সড়কের কাজও শুরু হয়েছে। আশা করি দ্রুত কাজ শেষ হবে।’
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সালেহ হাসান প্রামাণিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্রিজটি কাজ শুরু হওয়ার পরে আমাদের হাইট বাড়াতে হয়। সে কারণে আমাদের কিছু ডিজাইনের পরিবর্তনের কারণে ব্রিজটা একটু সময় লেগেছে। হাইট বাড়ার কারণে আমাদের দুইপাশের অ্যাপ্রোচের ডিজাইনেও কিছু চেইঞ্জ আসে। নতুন ডিজাইন আসার পরে কিছু সমস্যাও ছিল।
‘বর্তমানে ব্রিজের কাজ সমাপ্ত হয়ে গিয়েছে। স্কুলপ্রান্তের একপাশের অ্যাপ্রোচের কাজ চলমান আছে। অপর মাসের কাজটিও টেন্ডার হয়ে এখন কাজ শুরুর অপেক্ষায় আছে। আশা করি দুই মাসের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করতে পারব। আমরা চেষ্টা করব, যত দ্রুত এলাকার মানুষের কষ্ট লাঘব করা যায়।’
সেতুটির নকশায় ত্রুটি ও ঠিকাদারের গাফিলতি আছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মেইন জিনিসটা কিন্তু আপনাদের বোঝাতে পারছি না। আমরা যখন কোনো ব্রিজ তৈরি করি তখন একটা নেভিগেশন অ্যাপ্রুভাল লাগে, যেটা পানি উন্নয়ন বোর্ড দেয়। এখন তাদের যে সিস্টেমটাতে পাঁচটা ক্যাটেগরি করছে নদীপথ ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী। সেই ক্রাইটেরিয়ায় আমাদের কাছে মনে হয়, তারা ওই খালটা ভিজিট না করেই তাদের টোটাল ম্যাপ অনুযায়ী অ্যাপ্রুভালটা দিয়ে দিচ্ছে।’