পুলিশি সেবার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু থানা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) থানাগুলোতে সেবার মান বাড়লেও তা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছতে পারছে না। থানায় সেবা নিতে গিয়ে পুলিশি হয়রানি- দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়া, ঘুষ দিতে বাধ্য হওয়ার অভিযোগ বরাবরের। কিন্তু অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি নেই।
এমন বাস্তবতায় ডিএমপির থানাগুলোতে নগরবাসীর হয়রানিমুক্ত সেবার পরিবেশ তৈরি করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। একইসঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
শুক্রবার নিউজবাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব চ্যালেঞ্জ ও তা মোকাবিলায় প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন ডিএমপির এই কমিশনার।
ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৯ অক্টোবর ডিএমপির ৩৫তম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন খন্দকার গোলাম ফারুক। দায়িত্ব গ্রহণের পরই থানাগুলোতে সাধারণ ডায়েরি ও মামলার তদারকি বাড়িয়েছেন তিনি।
বাদী বা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে থানায় কেমন সেবা পেয়েছেন, কোনো ঘুষ দিতে হয়েছে কিনা, দুর্ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা- এমন সব বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে সদর দপ্তর।
ডিএমপি কমিশনার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘থানা হলো পুলিশি সেবা প্রদানের কেন্দ্রবিন্দু। সেই থানায় গিয়ে লোকজন যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হয়, অযথা সময়ক্ষেপণ করা না হয় সেদিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। থানার অফিসাররা স্মার্টলি সবকিছু যদি ডিল করে তাহলে জনগণের সেবাপ্রাপ্তির যে প্রত্যাশা তা আমরা পূরণ করতে পারব। সেজন্য আমরা থানার কাজটাকে বেশি গুরুত্ব দেই এবং বেশি মনিটরিং করি।’
খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘অপরাধীরা ক্রমশ সাইবার অপরাধের দিকে ঝুঁকছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা এখন আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। তরুণ প্রজন্মসহ শিক্ষিতদের পাশাপাশি অশিক্ষিতরাও সাইবার বিষয়ে এক্সপার্ট হয়ে যাচ্ছে, অপরাধে জড়াচ্ছে। সামনে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে সাইবার অপরাধকে নিয়ন্ত্রণে রেখে সাইবারের বড় হামলা-হুমকি থেকে দেশ, জনগণ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। সেই স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্মার্ট পুলিশ বাহিনী তৈরি করাটাও আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশের প্রধান লক্ষ্য থাকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন গোষ্ঠী বিভিন্ন সময় অপতৎপরতা চালায়। এই অপতৎপরতা কখন কোন ফর্মে আসবে সেটা আগে থেকে জেনে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়াটা পুলিশের জন্য চ্যালেঞ্জের, যা সব সময়ই থাকে।’
চলতি বছরের শেষে অথবা ২০২৪ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে কমিশনার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি করবে। এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে রাজনীতির নামে সাধারণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা বা জান-মালের ক্ষতির ঘটনা ঘটলে তা মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি থাকবে।
‘নির্বাচনের বছরে অনেকে রাজনীতির নামে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করবে। সেটা যেন করতে না পারে সেজন্য আমাদের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। ডিএমপিও কাজ করে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আগাম সংবাদ সংগ্রহ করে প্রিভেন্টিভ মেথড নেয়া এবং দৃশ্যমান কোনো অপরাধ করলে তাৎক্ষণিক অ্যাকশনে যাওয়া এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।’
ডিএমপির ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি কাল
বাংলাদেশ পুলিশের সবচেয়ে বড় ইউনিট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) প্রতিষ্ঠার ৪৭ বছর পেরিয়ে ৪৮ বছরে পা দিয়েছে। চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ছিল সেই দিন। তবে নানা আনুষ্ঠানিকতায় দিনটি পালন করা হবে শনিবার।
বিকেল ৩টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হবে প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানমালা। শোভাযাত্রায় ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সব স্তরের পুলিশ সদস্য অংশ নেবেন। এতে যুক্ত থাকবে ডিএমপির সুসজ্জিত অশ্বারোহী ও ব্যান্ড দল, ডগ স্কোয়াড, সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটসহ অন্যান্য ইউনিটের সদস্যরা।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে থাকবে অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন। বিশেষ অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
দেশের খ্যাতনামা অভিনেতা, অভিনেত্রী, সংগীতশিল্পী ও নৃত্যশিল্পী এবং ডিএমপি শিল্পীগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রয়েছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৬ সালে ১ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় ডিএমপি। বর্তমানে ডিএমপিতে ৫৭টি বিভাগ ও ৫০টি থানা রয়েছে। এতে একজন পুলিশ কমিশনার, ৬ জন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, ১২ জন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, ৫৭ জন উপ-পুলিশ কমিশনারসহ প্রায় ৩৪ হাজার পুলিশ সদস্য কর্মরত রয়েছেন।