চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে (চমেক) শিবির সন্দেহে চার শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বহিষ্কৃত কয়েকজন ছাত্রের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্তরা সবাই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা।
মারধরে আহত চার ছাত্রের মধ্যে দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউতে) চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। মারধরের শিকার চারজন হলেন ৬২ তম ব্যাচের এম এ রায়হান, মোবাশ্বির হোসেন শুভ্র, জাহিদ হোসাইন ওয়াকিল এবং সাকিব হোসেন।
তাদের মধ্যে জাহিদ হোসাইন ওয়াকিল এবং সাকিব হোসেন চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
অভিযুক্তরা হলেন, ২০২১ সালে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় বহিস্কৃত ৬০ তম ব্যাচের অভিজিৎ দাশ, দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত ৫৯ তম ব্যাচের রিয়াজুল ইসলাম জয়, এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত জাকির হোসাইন সায়েম ও মাহিন আহমেদ। এর মধ্যে অভিজিৎ ও জয়ের বহিষ্কারের আদেশ এখনো বহাল রয়েছে।
এ ছাড়াও মারধরের আভাস পেয়ে হোস্টেল ছেড়ে পালিয়েছে আরও তিন শিক্ষার্থী।
তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূলত আমাদের ৬২ তম ব্যাচের কয়েকজনের সঙ্গে ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে আমাদের শিবির ট্যাগ লাগিয়েছে ওরা। শিবির ট্যাগ লাগিয়ে ব্যাচের চারজনকে বুধবার রাত ১টার দিকে ডেকে নিয়ে যায়। হোস্টেলের দুই তলার আলাদা কক্ষে রাত দুটা থেকে মারধর শুরু করে তাদের। এরমধ্যে একজনের অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে গেলে তাকে চমেক হাসপাতালে না নিয়ে আন্দরকিল্লায় জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায় যেন কেউ জানতে না পারে। পরে তাকে আবার রুমে নিয়ে আসে।
‘রাতেই বিষয়টি হল সুপারকে জানানো হলেও তিনি তাদের উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেননি। পরে দুপুরে ম্যাম (চমেক অধ্যক্ষ) পুলিশ নিয়ে গিয়ে দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছে৷ বাকি দুজনকে মারধারকারীরা বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে।’
এই বিষয়ে অভিযুক্ত অভিজিৎ দাশ বলেন, ‘তাদের এক সপ্তাহ ধরে পর্যবেক্ষণ করছিলাম আমরা। তারা নির্বাচনকে সামনে রেখে কলেজে শিবিরের নেটওয়ার্ক তৈরির চেষ্টা করছিল। তাই তাদের ডেকে নিয়ে তাদের কাছ থেকে শিবিরে জড়িত থাকার ডকুমেন্টস নেয়া হয়েছে। ডকুমেন্টসগুলো নেয়ার সময় হালকা চড়-থাপ্পড় দিতে হয়েছে, মারধর করা হয়নি।’
‘তাদের রুম থেকে অস্ত্রসস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। ডকুমেন্টস ও অস্ত্রসস্ত্র পুলিশকে জমা দেয়া হয়েছে।’
বহিষ্কারাদেশ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে হলে থাকছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওটা সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। কয়েকমাস পরেই বহিষ্কারাদেশ উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।’
অভিযুক্ত আরেকজন রিয়াজুল ইসলাম জয়ের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আকতার বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে পুলিশ নিয়ে দুইজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ভালো সেবা পাওয়ার জন্য তাদের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। আহত ছাত্ররা মারধরের বিষয়ে আমাদের কাছে কিছুই বলতেছেনা ৷ তারা বলছে বাথরুমে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে।’
বহিষ্কৃতরা হলে থেকে ছাত্রদের মারধার করতে পারেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বহিষ্কৃত কেউ হলে থাকতে পারবে না। এটা আমাদের তদারকিতে আছে। আমরা হলে গিয়ে বহিষ্কৃত কাউকে পাইনি। আমরা এখন আহত ছাত্রদের চিকিৎসার দিকে জোর দিচ্ছি। তারা একটু সুস্থ হলে খুটিয়ে খুটিয়ে সবকিছু বের করার চেষ্টা করব।’