বগুড়ায় আবাসিক বাসভবনে ছাত্র-ছাত্রীদের বসবাসে গ্যাস বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে; এমন অজুহাতে শহরের অন্তত ১০টি বাড়ির সংযোগ রাতের বেলায় বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
তবে এ নিয়ে অদ্ভুত ব্যাখ্যা দিয়ে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির (পিজিসিএল)। তারা বলছে, আইনের বাইরে কারও বিচ্ছিন্ন করা হলে তাদের পুনরায় আবেদন করতে হবে। তাহলে আবাসিক হিসেবে তাদের গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের বৃন্দাবন পাড়ায় জানুয়ারি মাসের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ১০টি বাড়ির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন পিজিসিএলে ভিজিলেন্স টিম।
এ সময় গ্যাসের রাইজার খুলে নেন তারা। সাধারণত রাত ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে এসব বাড়ি থেকে লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়। রাতের বেলায় এভাবে গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে বাড়িওয়ালাদের কোনো আগাম নোটিশ দেয়া হয়নি। হঠাৎ তারা বাড়িতে হাজির হয়ে গ্রাহকদের এমন ভোগান্তিতে ফেলেছেন।
ভোগান্তির বিষয়ে তারা পিজিসিএল বগুড়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে কোনো সমাধান পাননি। পরে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। একই অভিযোগ একদিন আগে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও দিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়, গত ৮-১০দিনে বৃন্দাবন পাড়ায় আগাম নোটিশ ছাড়াই অবৈধভাবে তাদের বাড়ির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এরপর থেকে ওই বাসাগুলোয় রান্নার সংকটে পড়তে হয়। তারা বর্তমানে সিলিন্ডার গ্যাস বা খড়ি চুলায় রান্নার কাজ করছেন।
অভিযোগকারীদের মধ্যে একজন মো. জাকারিয়া তালুকদার। তিনি পাঁচতলা ভবনের নিজে থাকেন তৃতীয় তলায়। বাকিগুলোয় প্রায় ৪৫ জন ছাত্রী ভাড়া নিয়ে বাস করেন। চলতি মাসের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে তার বাড়ির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভিজিলেন্স টিম। এরপর থেকে রান্নার সংকটে পড়তে হয় এ বাসার মানুষদের।
জাকারিয়া তালুকদার বলেন, ‘রাত ৯টার দিকে এসে গ্যাস কোম্পানির লোকজন রাইজার কেটে নিয়ে যায়। কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন আমি নাকি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছি।’
জাকারিয়া আরও বলেন, ‘তারা বলেছেন একটি বাসায় পাঁচ-সাতজনের বেশি থাকলে মেস হবে। কিন্তু আমার কথা পরিবারে কী এর বেশি সদস্য থাকতে পারে না। তাহলে কিসের ভিত্তিতে তারা বাণিজ্যিক বলছে আমাদের বাসাকে।’
একই অভিযোগ ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা চাঁন মিয়া।
তিনি বলেন, ‘আমরা তো নিজেরা কোনো মেস পরিচালনা করি না। মেয়েরা থাকে। তারা বাসা-বাড়িতে নিরাপদ বোধ করে। মেয়েরা ভাড়া নিয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুতের বিল তারা নিয়মিত দেয়। তারা নিজেরা বাজার করে, কাজের বুয়া রান্না করে, এই। এখানে আমরা বাসা ভাড়া দেই শুধু।’
আর আমার বাসায় গ্যাস সংযোগ কাটার আগে জহুরুল ইসলাম বিকন নামে এক গ্যাস ঠিকাদার ফোন দিয়েছিল বলে দাবি করেন চাঁন মিয়া।
ওই ভুক্তভোগী বলেন, ‘জহুরুল ফোন দিয়ে বলে লিস্ট থেকে আপনার বাড়ির নাম কেটে দেয়ার ব্যবস্থা করছি। আপনি কী দিবেন দেন। আর বাসার সামনে থেকে ছাত্রী নিবাসের সাইনবোর্ড খুলে ফেলেন।’
জহুরুল ইসলামের পিজিসিএল বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ে লাইসেন্সভুক্ত ঠিকাদার। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলে, ‘বগুড়া আঞ্চলিক অফিসের কথামতে তিনি বৃন্দাবন পাড়ার বাসিন্দাদের সাবধান করার জন্য বলেছিলেন। কারও কাছে টাকা বা অন্য কোনো সুবিধা নেয়ার উদ্দেশ্যে নয়।’
বগুড়ায় অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তরের ভিজিলেন্স টিমের ব্যবস্থাপক মো. নাজমুল হক খান।
তিনি জানান, স্থানীয়ভাবে অভিযোগের ভিত্তিতে বগুড়ার বৃন্দাবন পাড়ায় জানুয়ারির শেষের দিকে একটি অভিযান হয়েছিল। আর ফেব্রুয়ারিতে আরেকটি অভিযান হয়। ফেব্রুয়ারির অভিযানে ৬ টি বাসার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
মো. নাজমুল হক খান বলেন, ‘বাসা-বাড়িতে বানিজ্যিকভাবে গ্যাস ব্যবহার করার নিয়ম নেই। এ জন্য লাইন কেটে দেয়া হয়। এটা আমাদের হেড অফিস থেকে নির্দেশ দেয়া আছে। আমরা নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করি।’
অথচ গ্যাস বিপনন নিয়মাবলী ২০১৪ তে উল্লেখ হয়েছে, আবাসিকের গ্রাহক বলতে বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত বাড়ি, এমরাত, বিভিন্ন সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার ফ্লাট বা কলোনী, ক্যান্টিন এবং অব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পরিচালিত ছাত্রাবাস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগার, সরকারি হাসপাতাল, মেস, শিশু সদন, আশ্রম, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা, মাজার, দাতব্য প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি এই শ্রেণিভূক্ত হবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পিজিসিএলের বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘অভিযানের রিপোর্ট আমরা এখনও পাইনি। রিপোর্ট পেলে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে ডিমান্ড দিব। গ্রাহকরা টাকা পরিশোধ করলে পিজিসিএলের পরিচালনা পর্ষদের চূড়ান্ত অনুমোদন দিবে। অনুমোদন আসলে ওই আবাসিক ফ্লাটে আবার সংযোগ নিতে পারবে।’
জেলা প্রশাসনে অভিযোগের বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দিনেশ সরকার বলেন, ‘বৃন্দাবন পাড়ার বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’