বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মুকুলের পরিবর্তে বের হচ্ছে নতুন পাতা, দুশ্চিন্তায় লিচু চাষিরা

  •    
  • ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৭:২৯

এমন পরিস্থিতিতে চাষিরা বিষ দিয়ে নতুন পাতা পুড়িয়ে নষ্ট করছেন । কৃষকদের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে গাছগুলোতে মুকুলের শীষ আসার পরিবর্তে নতুন পাতা বের হলেও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। এ সমস্যা সমাধানে দেশে লিচু গবেষণাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুর। এ জেলায় উৎপাদিত লিচু দেশ ও বিদেশে সরবরাহ করা হয়। শীতের শেষে লিচু গাছগুলোতে মুকুলের শীষ বের হওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ গাছে নতুন পাতা বের হয়েছে, যা কৃষকদের জন্য শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ নতুন পাতা বের হলে ওই গাছ কিংবা ডালে কোনো ধরনের লিচু ধরবে না।

এমন পরিস্থিতিতে চাষিরা বিষ দিয়ে নতুন পাতা পুড়িয়ে নষ্ট করছেন । কৃষকদের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে গাছগুলোতে মুকুলের শীষ আসার পরিবর্তে নতুন পাতা বের হলেও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। এ সমস্যা সমাধানে দেশে লিচু গবেষণাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলায় ৫ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমি থেকে লিচু উৎপাদন হয়েছিল ৩১ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন। আর চলতি বছর আবাদ হচ্ছে ৫ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে।

দিনাজপুর জেলা সদরের পুলহাট, মাশিমপুর, শিকদারহাট, সৈয়দপুর, উলিপুর গ্রামে সবচেয়ে বেশি লিচুর ফলন হয়। সরেজমিনে কয়েকটি লিচু বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগানগুলোর অধিকাংশ গাছে মুকুলের শীষ বের হওয়ার পরিবর্তে নতুন পাতা বের হচ্ছে।

সৈয়দপুর গ্রামের লিচু চাষী সাইদুর রহমান তার বাগানে আসা নতুন পাতা বিষ প্রয়োগ করে নষ্ট করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ আমার বাগানে মোট ৮০টি লিচুর গাছ রয়েছে। বাগানের অধিকাংশ গাছে বর্তমানে নতুন পাতা বের হচ্ছে। তাই আমি আমার বাগানে গবেষণা চালাচ্ছি। গাছের নতুন পাতা নষ্ট করার জন্য একটা ওষুধ ব্যবহার করেছি। আমরা এত সমস্যার মধ্যে আছি, কিন্তু কৃষি কর্মকর্তারা কোনো দিন আমাদের কাছে আসে নাই। তারা কি ধরনের কাজ করে তাও আমরা জানি না।’

দক্ষিণ উলিপুর গ্রামের লিচু চাষি মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘ এবছর দিনাজপুরে আবহাওয়ার কারণে লিচুর গাছগুলো নতুন পাতা ছেড়ে দিচ্ছে। এতে আমরা চিন্তিত হয়ে পড়েছি। কারণ নতুন পাতায় লিচুর মুকুল কিংবা লিচু ধরে না। আমার বাগানে এখন পর্যন্ত কোনো কৃষি কর্মকর্তাকে আসতে দেখলাম না। অনেক টাকা দিয়ে বাগান নিয়েছি। কিন্তু ফল না পেলে অনেক ক্ষতি হবে আমার।’

উলিপুর গ্রামের লিচু চাষি জাহাঙ্গীর আলম রঞ্জু বলেন, ‘ আমার মোট ছয়টি বাগান রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি বাগানের অবস্থা খুবই খারাপ। এবছর শীত খুব কম হওয়ায় লিচু গাছ পাতা আগেভাগে ছেড়ে দিয়েছে। ফলে এখন মুকুল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম রয়েছে।’

উদ্ভিদবীদ মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘ গত কয়েক বছর ধরে দিনাজপুরের লিচুর বাগানগুলোতে ক্রমাগতভাবে লিচুর ফলন কমে আসছে। এটি আমাদেরকে আশঙ্কাজনক অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এর জন্য দায়ী বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। মূলত শীত ও উষ্ণ আবহাওয়ার সংমিশ্রনে কারণে বসন্তকালের শুরুতে যখন লিচুর মুকুলের শীষ বের হয়ে। এর জন্য প্রয়োজন অক্সিন নামের একটি হরমোন। এই হরমোনটি কাজ না করার কারণে নতুন পাতা বের হচ্ছে।’

এ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘দিনাজপুরের লিচুর একটা ঐতিহ্য রয়েছে। পাশাপাশি লিচুর সঙ্গে অথনৈতিক বিষয়টিও জড়িত। তাই এবিষয়টি নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে করণীয় ঠিক করতে হবে।’

এব্যাপারে দিনাজপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ আলম বলেন, ‘এবছর দিনাজপুরে বৃষ্টিপাত খুব কম হয়েছে। আবহাওয়ার কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর লিচুর মুকুলের পরিবর্তে নতুন পাতা বের হচ্ছে। তাই এবছর লিচুর ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারপরও আমরা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর