বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কাশ্মীরি-বল সুন্দরী বরই চাষে বাজিমাত রড মিস্ত্রি লিটনের

  •    
  • ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১১:০১

বরই চাষি লিটন হোসেন বলেন, আমি রড মিস্ত্রীর কাজ করতাম। গত বছরের জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন জায়গায় ও টিভিতে কাশ্মীরি ও বল সুন্দরী বরই চাষের সংবাদ দেখেছি। এ ছাড়া আমাদের এলাকাতে বেশ কয়েকবার কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ দিবসে বরই চাষ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। সেখান থেকেই মাথায় আসে বরই চাষ করার কথা। চারা রোপণের পর পোকা ও পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষায় বাগানের চারপাশে মশারি জালের বেড়া দেয়া দিয়েছি। তাই চারাগুলো ভালোভাবে বেড়ে উঠেছে।’

গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে সুস্বাদু মিষ্টি বরই। দেখতে লাল আপেলের মতো। নাম কাশ্মীরি বরই। স্থানীয়দের কাছে কাশ্মীরি বরই আপেল কুল, বল সুন্দরী, বাড়ি কুল ও টক-মিষ্টি হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে এর।

এই বরইয়ের রোগবালাই কম, খরচও অল্প। মাত্র এক বছরের মধ্যেই কাশ্মীরি ও বল সুন্দরী বরই চাষে সফল হয়েছেন নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের মকমলপুর গ্রামের ৩৬ বছর বয়সী রড মিস্ত্রি লিটন হোসেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে চুয়াডাঙ্গা থেকে ৫০০টি কাশ্মীরি ও ৫৫০টি বল সুন্দরী জাতের চারা এনে ৭ বিঘা জমিতে রোপণ করেন।

অক্লান্ত পরিশ্রম ও পরিচর্যায় মাত্র ১২ মাসের মাথায় সবকটি গাছে থোকায় থোকায় বরই ধরেছে। বরই চাষে এক বছরেই লিটনের এমন সফলতা দেখে এলাকার কৃষকরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন বরই চাষে।

এক বছরে এত ফলন হওয়ায় অনেকেই বাগানটি দেখতে আসছেন।

স্থানীয় মকমলপুর গ্রামের কৃষক হোসেন আলী বলেন, ‘আমরা মূলত সবজি হিসেবে শিম, বেগুন, লাউ, আলুর আবাদ করে থাকি। কখনও বাণিজ্যিকভাবে কাশ্মীরি ও বল সুন্দরী বরইয়ের আবাদ করা হয়নি। লিটন ৭ বিঘা জমিতে বরইয়ের বাগান করেছেন। এক বছরের মধ্যেই গাছগুলোতে বরই ধরেছে। বিক্রি করার উপযোগী হয়েছে। লিটনের বাগান ঘুরে দেখলাম। এই জাতের বরই চাষ করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

একই গ্রামের যুবক মোসারফ হোসেন বলেন, ‘এক বছর আগে যখন লিটন ভাই কাশ্মীরি ও বল সুন্দরী বরই গাছের চারা রোপণ করে তখন ভাবছিলাম হয়তো বরই ধরতে দুই থেকে তিন বছর লেগে যাবে। আর রোগবালাই বেশি, ফলন কম হবে। এখন দেখলাম কম খরচ, রোগবালাই তেমন নাই আর ফলও ধরেছে। আমি বর্তমানে বেকার। কৃষি অফিস থেকে সহায়তা ও পরামর্শ পেলে আগামীতে আমিও লিটন ভাইয়ের মতো বরই চাষ করব।’

ছুটির সময় লিটনের বাগানে শ্রমিকের কাজ করে পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন স্থানীয় চকআতিতা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র পিয়াস হোসেন ও অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র মারুফ হোসেন।

তারা বলেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে ৩ ঘণ্টা করে কাজ করি। প্রতিদিন ২০০ টাকা করে পাই। সেটা দিয়ে পড়াশোনার জন্য কাজে লাগাই।’

বরই চাষি লিটন হোসেন বলেন, আমি রড মিস্ত্রীর কাজ করতাম। গত বছরের জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন জায়গায় ও টিভিতে কাশ্মীরি ও বল সুন্দরী বরই চাষের সংবাদ দেখেছি। এ ছাড়া আমাদের এলাকাতে বেশ কয়েকবার কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ দিবসে বরই চাষ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। সেখান থেকেই মাথায় আসে বরই চাষ করার কথা। চারা রোপণের পর পোকা ও পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষায় বাগানের চারপাশে মশারি জালের বেড়া দেয়া দিয়েছি। তাই চারাগুলো ভালোভাবে বেড়ে উঠেছে।’

খরচ ও লাভের বিষয়ে জানতে চাইলে লিটন বলেন, ‘আমার নিজের তেমন জমি নেই। তাই অন্যের কাছে ৮ বছরের জন্য ৭ বিঘা জমি চুক্তিভিত্তিক লিজ নিয়েছি। বিঘা প্রতি বাৎসরিক জমির মালিককে ২০ হাজার টাকা করে দিতে হয়। ৭ জন শ্রমিক আছে, তাদের মসিক ও ঘণ্টা চুক্তি হিসেবে পারিশ্রমিক দিতে হয়।’

লিটন আরও বলেন, ‘বাগানে বরই গাছের গোড়া পরিষ্কার, স্প্রে করা, সার দেয়া, সেচ, ওষুধ ও শ্রমিক খরচসহ মোট খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকার মতো। প্রতিটি গাছ থেকে ৩৫ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত বরই পাওয়া যায়। ইতোমধ্যে ১৪০০ টাকা মণ ধরে ৪ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছি। আগামী তিন মাস আরও বরই বিক্রি করতে পারব। মোট ১০ লাখ টাকার বরই বিক্রি হবে বলে আশা করছি। সব খরচ বাদ দিয়ে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার মতো লাভের আশা করছি। বাজারে বরইয়ের দাম ভালো রয়েছে। রোগ বালাইও তেমন নেই। কৃষি অফিস থেকেও পরামর্শ দেয়া হয়।’

নওগাঁ সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রতন আলী বলেন, ‘নাতিশীতোষ্ণ ও উষ্ণমণ্ডলীয় জলবায়ু বরই চাষের জন্য উপযোগী। ফলন ভালো, দেখতে সুন্দর এবং খেতেও সুস্বাদু এ বরইগুলো। ভালো দাম পাওয়ার আশায় কৃষকরা এখন নতুন নতুন ফসল ও ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। নওগাঁর এ অঞ্চলে এই জাতগুলোর বরই চাষ তেমন নেই বললেই চলে।

‘কাশ্মীরি ও বল সুন্দরী বরই চাষে ফলন বেশি ও দাম ভালো হওয়ায় কৃষকদের এই জাতের বরই চাষে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। লিটন বর্তমানে সফল একজন বরই চাষি। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৭ লাখ টাকার লাভের আশা করছেন তিনি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় বরইয়ের আবাদ হয়েছে ৪৫৩ হেক্টর জমিতে। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন হাজার ৫৫০ টন। আগামীতে এ জাতের বরইগুলোর বাগান আরও বাড়বে পাবে বলে মনে করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

এ বিভাগের আরো খবর