উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রি মূল্য এবং বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে টাকার মূল্যমান সমন্বয়ের জন্য সরকার জ্বালানির দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার জ্বালানির দাম কিছুটা বাড়িয়েছে।
বুধবার সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সদস্য ফখরুল ইমামের লিখিত প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেত্রী এসব তথ্য জানান।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরও দেশবাসীকে নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সুবিধা দেয়া এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিনিয়োগ, উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রয়মূল্যের মধ্যে সমন্বয় করতে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী সব ধরনের জ্বালানির মূল্যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। জ্বালানি-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয়, যেমন বিমা খরচ, ঝুঁকিব্যয়, ব্যাংক সুদ, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান সমন্বয় করায় সামগ্রিকভাবে জ্বালানি খাতে ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি মূল্যও অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে সরকার বিপুল অর্থ ভর্তুকি বাবদ দিয়ে আসছিল।
সরকার প্রধান বলেন, ‘কৃষি সেচ মৌসুম, আসন্ন রমজান ও গরমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের বর্ধিত চাহিদা মেটানো, শিল্প খাতে উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখা এবং রপ্তানিমুখী বিভিন্ন কলকারখানার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য স্পট মার্কেট থেকে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করে বর্ধিত এই চাহিদা পূরণ করতে হবে। এ কারণে সরকার অন্যান্য ভোক্তা শ্রেণিকে অপরিবর্তিত রেখে শুধু বিদ্যুৎ, শিল্প, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ও বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অপচয় রোধ করার মাধ্যমে মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নিয়মিত ঝটিকা অভিযানের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, জরিমানা, আইনগত ব্যবস্থা নেয়া ইত্যাদি।’
৬ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১২ হাজার ৪৫২ মিলিয়ন ডলার
সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য রুমানা আলীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান, চলতি অর্থবছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬ মাসে ১২ হাজার ৪৫২ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
তিনি জানান, কোভিড মহামারির পরও ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রাপ্ত রেমিট্যান্স যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৭৭ ও ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৫২ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অর্জিত হয়েছে।
২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান, বিদ্যমান বাজার সুসংহতকরণ ও সম্প্রসারণের পাশাপাশি বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করা, বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ দেয়া, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রণোদনা দেয়া, সচেতনতা তৈরি, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, অধিকসংখ্যক গুণগত ও টেকসই মানবসম্পদ পাঠানোসহ নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে সংসদে তুলে ধরেন সরকার প্রধান।