উপহারের গাড়ি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। এই গাড়ির নেই ফিটনেসের মেয়াদ, পরিশোধ করা নেই ট্যাক্সও।
সোমবার হবিগেঞ্জর চুনারুঘাট উপজেলার শিক্ষক এম মুখলিছুর রহমান তাকে এই গাড়ি উপহার দিয়েছেন। তবে ওই ফি জমা না দিয়ে গাড়ি রাস্তায় বের করতে পারবেন না হিরো আলম।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য বলছে, টয়োটা নোয়া ১৯৯৮ মডেলের পুরনো এই গাড়িটির ফিটনেস শেষ হয়েছে এক দশক আগে। একই সময় মেয়াদউত্তীর্ণ হয়েছে ট্যাক্স টোকেনেরও। সব মিলিয়ে গাড়িটি রাস্তায় নামাতে হলে সরকারকে হিরো আলমের পরিশোধ করতে হবে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার দুটি আসন থেকে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হিরো আলমকে গত ৩০ জানুয়ারি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার নরপতি গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনের প্রিন্সিপাল এম মুখলেছুর রহমান তার ব্যবহৃত গাড়িটি উপহার দেয়ার ঘোষণা দেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ঘোষণার পর হিরো আলম গাড়িটি নিতে চাইলে মুখলেছুর রহমান গড়িমসি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে বেশ সমালোচিত হন ওই শিক্ষক।
আলোচনা-সামলোচনার পর মঙ্গলবার চুনারুঘাটের নিজ বাড়িতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হিরো আলমের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেন মুখলিছুর রহমান।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি ওয়াদা করেছিলাম নির্বাচনে হিরো আলম জয়ী হোন বা না হোন পরের দিন আমার বাড়িতে আসলে আমি গাড়িটি তার হাতে তুলে দেব।
‘কিন্তু কিছু লোক বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার সমালোচনা করেছেন। এতে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। আমি সিলেটবাসীর সম্মান ক্ষুন্ন করতে দেব না। সম্মানের সঙ্গে আমি হিরো আলমকে গাড়িটি তুলে দিতে পেরে খুশি।’
গাড়ি উপহার পাওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘আমার ভাই ভালোবেসে আমাকে গাড়িটি উপহার দিয়েছেন। আমি এই গাড়ি গ্রহণ করলাম। তবে এই গাড়িটি আমি নিজে ব্যবহার করব না। সাধারণ মানুষের কল্যাণে অ্যাম্বুলেন্স বানানোর জন্য গাড়িটি দান করে দেব।’
হিরো আলমের হাতে তুলে দেয়ার পর পুরনো এই গাড়িটির ফিটনেস নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে।
বিআরটিএর তথ্য বলছে, টয়োটা নোয়া মডেলের ১৮০০ সিসি পুরনো এই গাড়িটির ফিটনেসের মেয়াদউত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই। একই বছরের ১৫ মার্চ টেক্স টোকেনের মেয়াদও শেষ হয়েছে।
রেজিস্ট্রেশন নবায়ন ও ভ্যাট-টেক্সসহ সব মিলিয়ে এই গাড়িটি রাস্তায় নামাতে হলে সরকারকে পরিশোধ করতে হবে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ বিআরটিএর সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে ওই গাড়ির ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস সনদ নবায়ন নেই। এছাড়া আরও বিভিন্ন বিষয় মিলিয়ে গাড়িটি রাস্তায় নামাতে হলে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা পরিশোধ করতে হবে।’
এ ব্যাপারে এম মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘২০১৮ সালে গাড়িটি ৬ লাখ টাকায় আমি এফিডেভিটের মাধ্যমে কিনেছিলাম। আমি যখন গাড়িটি কিনি তখনই এটার ফিটনেস সনদের মেয়াদউত্তীর্ণ ছিল। এছাড়া সর্বশেষ ট্যাক্সও পরিশোধ করা হয় ২০১৩ সালেই।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হিরো আলম বলেন, ‘গাড়িটি নেয়ার আগে ফিটনেস ও ট্যাক্সের বিষয়টি জানতাম না। পরে জানতে পেরে কাগজপত্র যাচাই বাচাই করে বিষয়টি বুঝতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি বিআরটিএর সঙ্গে কথা বলব। যেহেতু আমি গাড়িটি মানবসেবার জন্য দান করেছি। সেহেতু মানবিক দিক বিবেচনা করে কিছু কম-বেশি করে গাড়িটি রাস্তায় নামানো যায় কি না সেটার চেষ্টা করছি।’