চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের নতুন কমিটি ঘোষণার একদিন না যেতেই পদত্যাগ করেছেন দুই সহসভাপতি।
দুজনই সোমবার রাতে ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান বরাবর এক চিঠিতে পদত্যাগের বিষয়টি জানান।
পদত্যাগ করা দুজন হলেন সদ্য ঘোষিত কমিটির দুই সহসভাপতি নুরুল মোস্তফা মানিক ও রাজীবুল আহসান সুমন। দুজনই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি পদ প্রত্যাশী ছিলেন।
এরমধ্যে নুরুল মোস্তফা মানিক চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের বিদায়ী কমিটির সহসভাপতি ও মিরসরাই উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। অন্যদিকে রাজীবুল আহসান সুমন সন্দীপ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ২০১০ সালের পর তিনি দলীয় কোনো দায়িত্বে ছিলেন না।
যুবলীগের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো পদত্যাগপত্রে নুরুল মোস্তফা মানিক লেখেন, ‘বিগত ৩৫ থেকে ৩৬ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছি। চাওয়া-পাওয়ার হিসেব-নিকেশ কিংবা ত্যাগ-তিতিক্ষার ফিরিস্তি তুলে ধরতে চাইনা। শেখ হাসিনার একজন কর্মী এই পরিচয়ই আমার জন্য যথেষ্ট। সদ্য ঘোষিত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সহসভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করতে সুযোগ দিয়ে বাধিত করবেন।’
রাজীবুল আহসান সুমন তার পদত্যাগপত্রে লেখেন, ‘আশি ও নব্বইয়ের দশক থেকে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ২০০১ পরবর্তী বিএনপি-জামাতের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে চট্টগ্রামের ছাত্র ও গণআন্দোলনে সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে অনেকবার গ্রেপ্তার ও পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছি।
‘২০১০ সালে সম্মেলন করে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকে দলের কোনো পর্যায়ে গুরু দায়িত্বে না থাকায় বিগত এপ্রিল ২০২২ এ বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দপ্তর সম্পাদক স্বাক্ষরিত নোটিশ বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক আমি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগে সভাপতি পদে প্রার্থী হিসাবে আমার সিভি জমা দিয়েছি।’
তিনি আরও লেখেন, ‘বিগত ২৯ মে ২০২২ এ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে দুজন কাউন্সিলর আমাকে সভাপতি প্রার্থী হিসাবে প্রস্তাব ও সমর্থন করেন। কিন্তু দীর্ঘ ১০ মাস পর ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে আপনার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার থেকে পাঠানো চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের আংশিক কমিটিতে আমার নাম সহসভাপতি হিসাবে দেখে বিস্মিত ও হতাশ হয়েছি। বিগত ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ আপনার সঙ্গে একান্ত আলাপেও সহসভাপতি পদে আমাকে রাখার বিষয়ে আপনাকে নেতিবাচক মতামত প্রদান করেছি।
‘যেহেতু আমি সহসভাপতি পদে সিভি জমা প্রদান করিনি, সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সহসভাপতি পদে আমার নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করা হয়নি এবং যেহেতু সহসভাপতি পদে থাকার আমার কোনো আগ্রহ বা ইচ্ছা নাই, তাই নবগঠিত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের ‘সহসভাপতি’ পদ থেকে আমি পদত্যাগ করছি। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের কমিটির ‘সহসভাপতি’ পদ থেকে আমার পদত্যাগ গ্রহণ করে কমিটি থেকে আমার নামটি বাদ দেয়ার অনুরোধ করছি।’
যোগাযোগ করা হলে সহসভাপতি হিসেবে নতুন কমিটির সঙ্গে কাজ করতে পারবেন না বলে জানান দুজনই।
নুরুল মোস্তফা মানিক বলেন, ‘আমি সভাপতি পদে সিভি জমা দিয়েছি। কমিটিতে সিনিয়র-জুনিয়র বজায় রাখা হয়নি। আমি সহসভাপতি হিসেবে কমিটির সঙ্গে কাজ করতে পারবনা। তবে পদের বাইরে আমি দলের জন্য কাজ করে যাব।’
রাজীবুল আহসান সুমন বলেন, ‘আমি ২০১০ সালের পর কোনো দলীয় পদে ছিলাম না। এর আগে উপজেলা ও উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম আমি। তাই এবার সভাপতি পদের জন্য সিভি জমা দিয়েছিলাম, সহসভাপতি হিসেবে নয়। কারো প্রতি রাগ-ক্ষোভ থেকে নয়, যেহেতু সহসভাপতি হিসেবে সিভি জমা দিইনি তাই পদত্যাগ করেছি।’
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলনের প্রায় নয় মাস পর কমিটি ঘোষণা করা হয়। সোমবার যুবলীগে কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৩২ সদস্যের আংশিক কমিটিতে উত্তর জেলা যুবলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশেদুল আলমকে সভাপতি ও সীতাকুণ্ডের মো. শাহজাহানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। নতুন কমিটিকে ৪৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে অনুমোদনের জন্য জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।