হকার উচ্ছেদ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আলোচিত নিয়াজুল ইসলাম স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন। তিনি মেয়র আইভীকে হত্যাচেষ্টা মামলারও প্রধান আসামি।
নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমি স্কুলে গত শুক্রবার বিকেলে সিটি করপোরেশনের ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিয়াজুল সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি পদে বসায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অনেকের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, প্রধান বক্তা ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা।
অনুষ্ঠানে খোকন সাহা দাবি করেন, ২০০০ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারে এলে নিয়াজুল সেসময় নির্যাতনের শিকার হন। এ কারণে তার হাতে ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির পদটি তুলে দেয়া হলো।
জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই ওয়ার্ডে নিয়াজুলের প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এ জন্য তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওইটা এমপি শামীম ওসমানের এলাকা। আমরা ভাবছিলাম ভালো লোক সভাপতি হবে, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।’
এদিকে নিয়াজুল ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যেও।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিয়াজুল ইসলাম একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। তিনি মেয়র আইভীকে গুলি করার উদ্দেশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে ধরেছিলেন। তিনি কীভাবে সভাপতি হন? তাকে সভাপতি বানিয়েছেন শামীম ওসমান। এটা পার্টির জন্য ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা।’
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত বলেন, ‘নিয়াজুল ইসলামকে সভাপতি করা মানে অসুস্থ রাজনীতি করা। এটি দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।’
এ বিষয়ে ত্বকী মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘নিয়াজুল সন্ত্রাসী, চানমারী বস্তি ও এলজিইডির ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়েছেন, গুলি করেছেন। তারা নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসের রাজনীতি করতে চান।’
২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে মেয়র আইভী ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুপক্ষের সংঘর্ষে আইভীসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। সেখানে নিয়াজুল ইসলামের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার ছবি প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। আইভীর সমর্থকরা মানবঢাল তৈরি করে তাকে রক্ষা করেন।
এ ঘটনার পাঁচদিন পর আইভীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নিয়াজুলসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে যান সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার। কিন্তু সে সময় পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে আদালতের নির্দেশে ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর মামলা নেয় পুলিশ।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর মেয়র আইভীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় অস্ত্রধারী নিয়াজুল ইসলাম, শাহ্ নিজামসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে অভিযোগপত্র থেকে অস্ত্র আইনের দুটি ধারা বাদ ও এজাহারনামীয় ৫ আসামিকে অব্যাহতি দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানির দিন নারাজি দেন মামলার বাদী আবদুস সাত্তার। আদালত আগামী ১ মার্চ নারাজি আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
এর আগে এক অনুষ্ঠানে মেয়র আইভী তার মামলা থেকে নিয়াজুল ও শাহ নিজামের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের দুটি ধারা বাদ ও এজাহারনামীয় ৫ আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে অভিযোগপত্র দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি মামলার তদন্তে নারাজি দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘প্রভাবশালীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা অস্ত্র আইনের ধারা দুটি বাদ দিয়েছেন।’