রোজাকে সামনে রেখে একটি চক্র প্রায় ২০০ কোটি টাকা সমমূল্যের দেশি-বিদেশি জাল নোট বাজারে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বলেছে, দেশে সংকটের সুযোগ নিয়ে জাল ডলার বাজারে ছেড়েছিল চক্রের সদস্যরা, যা কম দামে কিনে প্রতারিত হন অনেকে।
জাল টাকা, রুপি ও ডলার তৈরি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে ডিবি।
গ্রেপ্তার চারজন হলেন উজ্জল দাস ওরফে সোবহান শিকদার, আবদুর রশিদ, মমিনুল ইসলাম ও শাহ মো. তুহিন আহমেদ ওরফে জামাল। তাদের কাছ থেকে ২৭ লাখ টাকা মূল্যের জাল টাকা, ভারতীয় রুপি ও আমেরিকান ডলার, ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও জালনোট তৈরির বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ।
মিডিয়া সেন্টারে শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, পয়লা ফেব্রুয়ারি দারুস সালাম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জালনোট ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রস্তুতকারী চক্রের হোতা উজ্জল দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দারুস সালামের একটি বাসা থেকে জাল নোট ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রস্তুতকালে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপি ডিবির প্রধান বলেন, চক্রটি মতিঝিল এলাকা থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ, নয়াবাজার ও মিটফোর্ড থেকে রং, ফয়েল সংগ্রহ করে বিভিন্ন দেশের জাল নোট ও স্ট্যাম্প তৈরি করে আসছিল। বর্তমান বিশ্ববাজারে ডলার সংকট হওয়ায় তারা আমেরিকান জাল ডলার তৈরি করে বিদেশেও পাচার করছিল। একই সঙ্গে তারা ভারতীয় জাল রুপিও তৈরি করে।
ডিবি জানায়, সারা দেশে চক্রের এজেন্ট রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১ কোটি টাকার জাল নোট ১০ লাখে, এরপর ২০ লাখে এবং সব শেষ ধাপে ৫০ লাখে বিক্রি করতেন এর সদস্যরা। এজেন্টদের চাহিদা অনুযায়ী যেকোনো পরিমাণের জাল নোট প্রস্তুত করে দিতেন তারা। বাংলাদেশি মুদ্রার ক্ষেত্রে তারা কম মূল্যমানের নোটও (যেমন: ১০০ ও ২০০ টাকা) জাল করেছিলেন, যা খালি চোখে ধরা প্রায় অসম্ভব।
ডিবির প্রধান বলেন, ‘দীর্ঘ প্রায় ৮-৯ বছর ধরে চক্রটি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় স্বল্পমেয়াদে বাসা ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন মূল্যমানের জাল নোট, ভারতীয় রুপি, আমেরিকান ডলারসহ রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রস্তুত করে আসছিল। তাদের কাছে যে পরিমাণ জাল টাকা তৈরির কাগজ ও অন্যান্য উপকরণ পাওয়া গেছে, তা দিয়ে আগামী রমজান-ঈদুল ফিতরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার জাল নোট ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প বাজারে ছাড়তে পারত।’
এক প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ‘সস্তায় পেয়ে বাইরে থেকে ডলার কিনে অনেকে প্রতারিত হচ্ছেন। এর দায় যে কিনবে তারই। কারণ ডলার কেনা উচিত ব্যাংক অথবা কোনো অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জ থেকে।
‘আমরা এই চক্রটিকে সেদিন গ্রেপ্তার না করলে পরদিনই জাল নোট আর স্ট্যাম্পগুলো বাজারে চলে যেত। তাদের কিছু এজেন্টের নাম পেয়েছি। আমরা এসব নিয়ে কাজ করছি।’