সিলেটে সমাবেশের জন্য মঞ্চ প্রস্তুতের কাজ করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দুই-একজন করে নেতা-কর্মীও আসতে শুরু করেছেন সমাবেশস্থলে।
সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ ও রেজিস্টারি মাঠে বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ করবে।
দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে বিএনপির সমাবেশস্থলে ও ১টায় আওয়ামী লীগের সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দুই জায়গায় মঞ্চ প্রস্তুতের কাজ চলছে। ডেকোরেটর কর্মীরা মঞ্চের ব্যানার ঠিকঠাক করছেন। মঞ্চ দুটির সামনেই স্তূপ করে রাখা রয়েছে চেয়ার। মঞ্চ প্রস্তুতের পর মাঠে এই চেয়ারগুলো দেয়া হবে বলে জানান কর্মীরা।শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের মঞ্চ প্রস্তুতির কাজ তদারকি করছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত।
তিনি বলেন, ‘বিকেল ৩টায় আমাদের সমাবেশ শুরু হবে। সমাবেশের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ইতোমধ্যে সিলেট এসে পৌঁছেছেন। সমাবেশে বিশেষ অতিথি থাকবেন দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক।’বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ দুপুর ২টার পর শুরু হবে জানিয়ে দলটির সিলেট মহানগর কমিটির সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, ‘নামাজের পর থেকেই নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হবেন। সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদীর লুনা, ড. মো. এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জীবনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।’প্রায় ৫ বছর পর আলাদা কর্মসূচি নিয়ে সিলেটের রাজপথে মুখোমুখি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এর আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সিলেটে মুখোমুখি হয় প্রধান দুই রাজনৈতিক দল।
ওই দিন খালেদা জিয়ার সাজার রায়কে কেন্দ্র করে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় দুই দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অনেকে। এরপর উভয় দল নানা ইস্যুতে রাজপথে সরব থাকলেও কখনও মুখোমুখি হয়নি।পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি না থাকলেও গত বছরের ৬ নভেম্বর রাতে জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামাল হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে রাতে নগরের রিকাবীবাজারে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।শনিবার ‘বিভাগীয় সমাবেশ’ ও ‘শান্তি সমাবেশে’এর মাধ্যমে আবার রাজপথে মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল। দীর্ঘদিন পর একই দিনে দুই দলের কর্মসূচির কারণে সংঘাতের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
সরকারের ‘দমন-নিপীড়ন ও নির্যাতনের’ বিরুদ্ধে, বিরোধী দলের গ্রেপ্ততারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তি এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ ১০ দফা দাবিতে গত জানুয়ারিতেই সিলেটসহ সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি।সমাবেশ সফলে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সিলেটজুড়ে কর্মিসভা, পথসভা, জনসংযোগের মাধ্যমে সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগমের চেষ্টা করছেন তারা। সমাবেশের বিষয়টি অবহিত করে দলটির পক্ষ থেকে মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবরে চিঠিও দেয়া হয়েছে।অপরদিকে একই দিনে সিলেটে ‘শান্তি সমাবেশ’ করার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। প্রথমে এই সমাবেশ বিএনপির সমাবেশস্থল রেজিস্টারি মাঠে করার ঘোষণা দেয় দলটি, তবে পরে স্থান পরিবর্তন করে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়।
দুপুর ৩টায় এই সমাবেশ শুরু হবে। শান্তি সমাবেশ সফলেও প্রচার চালাচ্ছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। এই সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চায় দলটি।
অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শুক্রবার বিকেল থেকেই নগরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে জানিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস জানান, নগরের সবগুলো মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।